ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে ভবানীপুর আসনে উপনির্বাচনে জয়ের বিকল্প ছিল না মমতা ব্যানার্জির। কিন্তু সেখানে তিনি এমন রেকর্ড-রাঙা জয় পেলেন যে, মনে হতেই পারে ভোটটুকু শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি। এর আগে তার সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২০১১ উপনির্বাচনে, ব্যবধান ৫৪ হাজার ২১৩।

জয়ের পর কলকাতায় প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মমতা বলেছেন, ‘সব ভাষার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন। ভবানীপুরের সবকটি ওয়ার্ডে আমি বেশি ভোট পেয়েছি। এই প্রথম এমন হলো। ভবানীপুরের মানুষ গোটা ভারতকে দেখিয়ে দিল বাংলা কাকে চায়।’ নন্দীগ্রামের হার আজও যে তিনি মেনে নিতে পারেননি, তা এই ঐতিহাসিক জয়ের দিনেও স্পষ্ট করেছেন মমতা। বলেন, ‘সারা বাংলা খুব আঘাত পেয়েছিল যখন সব ভোটে জিতেও একটায় জিততে পারিনি। সেটা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।

সেটা নিয়ে এখন কিছু বলছি না। অনেক চক্রান্ত চলেছিল। সব চক্রান্ত জব্দ করে দিয়েছে বাংলার মানুষ, ভবানীপুরের মানুষ। ভবানীপুরের মানুষের কাছে আমি চিরঋণী।’ মমতাকে এদিন বিপুল জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তামিলনাড়ুর এমকে স্টালিন, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবরা। ভবানীপুরের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জ আসনে উপনির্বাচনেও বিশাল ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন মমতার প্রার্থীরা।

জঙ্গিপুরে ৯২ হাজারের বেশি ভোটের মার্জিনে জাকির হোসেন আর সামশেরগঞ্জে ২৬ হাজার ৬১১ ভোটের ব্যবধানে আমিরুল ইসলাম জিতলেন। আর এদিনই মমতা ঘোষণা করলেন ৩০ অক্টোবর চার আসনে উপনির্বাচনে কেন্দ্রের প্রার্থীর নামও। ভবানীপুর আসনে ভোটগ্রহণ হয় বৃহস্পতিবার। রোববার শাখাওয়াৎ স্কুলে গণনা শুরুর প্রথম রাউন্ড থেকেই এগিয়ে ছিলেন মমতা।

ইভিএম-এ মমতা ভোট পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৭০৯টি। পোস্টাল ব্যালটে পেয়েছেন ৫৫৪টি। মোট ভোট পেয়েছেন ৮৫ হাজার ২৬৩টি। তার প্রাপ্ত ভোটের হার প্রদত্ত ভোটের ৭১.৯%। বিজেপি প্রার্থী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ইভিএম-এ পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩২০ ভোট। পোস্টাল ব্যালটে পেয়েছেন ১০৮টি। মোট ভোট পেয়েছেন ২৬ হাজার ৪২৮টি। প্রিয়াঙ্কা পেয়েছেন প্রদত্ত ভোটের ২২.২৯ শতাংশ।

 

বাম প্রার্থী শ্রীজীব মোট ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ২২৬টি, শতাংশের হারে মাত্র ৩.৫৬। গত এপ্রিলের ভোটে নিজের দল ২১৩টি আসন পেলেও নিজে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে হেরে যান। সেই পরাজয় শুধু মমতা নয়, দলের কাছেও দুঃস্বপ্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভবানীপুরের ‘মিনি ভারত’ ভুলিয়ে দিল সেই পরাজয়। মমতা ব্যানার্জির এ বিপুল জয়ের জন্য গত কয়েকদিনে ভবানীপুরের মাটি কামড়ে অলিগলিতে, মাঠে-ময়দানে, বহুতল আবাসন থেকে বস্তি অঞ্চল-সর্বত্রই প্রায় চষে ফেলেছিলেন রাজ্যের পরিবহণ ও আবাসন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

ভোটের দিনেও তাকে সিপিএম পার্টি অফিসে বসে চা খেতে দেখা গিয়েছে। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জয়ের অন্যতম কান্ডারি তিনি। এবারের উপনির্বাচনে লড়াইটা মমতার সঙ্গে কখনোই বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কার ছিল না। লড়াই ছিল মমতার নিজের সঙ্গেই। ২০১৬ সালে ভবানীপুরে ২৬ হাজার ২৯৯ ভোটে কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সিকে হারিয়েছিলেন মমতা। আর এবার মমতা জিতলেন ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটের ব্যবধানে।

এবার ভোট ঘোষণার পরই মমতার পক্ষে প্রচার শুরু হয়েছিল ‘ভবানীপুর ঘরের মেয়েকে চায়’। গত এপ্রিলের ভোটে ভবানীপুরে বিজেপি ৪০ হাজারের ওপরে ভোট পেয়েছিল; কিন্তু এবার প্রিয়াঙ্কা মমতার বিরুদ্ধে ২৬ হাজার ৪২৮টি ভোট পেলেন।

ভবানীপুরের একটা বড় অংশের ভোটার হিন্দিভাষী। তাদের টার্গেট করেই অবাঙালি প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির। কিন্তু ভবানীপুরের ভোটপ্রচার থেকেই ‘বি ফর ভবানীপুর, বি ফর ভারত’ স্লোগান দেন স্বয়ং মমতা। ঘোষণা করেছিলেন, ‘ভবানীপুরের পর খেলা হবে সারা দেশে।’