আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে যাওয়া বিমান-হেলিকপ্টার এখন উড়াচ্ছে তালেবান। টহল দিচ্ছে রাজধানী শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। চলতি সপ্তাহেই কান্দাহার বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের বানানো আইকনিক একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার উড়ায় তালেবান যোদ্ধারা। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তালেবানের এই ব্ল্যাক হক উড়ানোর ছবি বিশ্বকে একটি বার্তাই দিচ্ছে, তা হলো-তালেবান এখন আর ভাঙাচোরা পিকআপ ট্রাকে চড়া একে-৪৭ বন্দুক হাতে আগের সেই যেনতেন যোদ্ধা নয়।
তাদের হাতে এখন প্রথমসারির যুদ্ধবিমানও আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে মার্কিন বাহিনীর অনুকরণে তালেবান ইতোমধ্যে এলিট ফোর্স ‘বদরি-৩১৩’ তৈরি করেছে। এবার তারা কুড়িয়ে পাওয়া বিমান-হেলিকপ্টার দিয়েই বিমানবাহিনী গড়ে ফেলতে পারে। আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম দেওয়ার জন্য গত ২০ বছরে আট হাজার ৩০০ কোটি ডলার খরচ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে কিছু নষ্ট হয়ে গেছে, কিছু ধ্বংস করে গেছে মার্কিনরা। বাকি প্রায় ছয় হাজার ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্র এখন তালেবানের হাতে। ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর এসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম দখলে নেয় তালেবানরা। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ভোররাতে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর শত শত ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার ও বিশেষ সামরিক যান হামভিসহ আধুনিকতম যুদ্ধ সরঞ্জামগুলো এখন পুরোপুরি তাদের দখলে।
তালেবানরা ইতোমধ্যে এসব সামরিক সরঞ্জামের কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশও করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানরা বর্তমানে এমন কিছু অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামের মালিক যা বহু দেশের সেনাবাহিনীর কাছেও নেই। তালেবানের সঙ্গে এক চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিলেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর পরই আফগান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করে তালেবান। অভিযানের মুখে একের পর এক শহরে আত্মসমর্পণ করতে থাকে আফগান সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দখল নেয় এর যোদ্ধারা।
গত মাসের শুরুর দিকে (৬ আগস্ট) প্রথম কোনো প্রাদেশিক রাজধানী নিমরোজ প্রদেশের জারাঞ্জ নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান। এরপর বিদ্যুতের গতিতে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখলের মাধ্যমে এগোতে থাকে রাজধানী কাবুলের দিকে। কাবুল দখলের মাত্র তিন দিন আগে (১৩ আগস্ট) আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার দখল করে নেয় তালেবান। নিয়ন্ত্রণে নেয় বিমানঘাঁটিও। এ সময় ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেশ কয়েকটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার এবং সোভিয়েত-নির্মিত এমআই-১৭ এসর মতো সামরিক হেলিকপ্টার ছিল। নিয়ন্ত্রণের পরপরই এসব হেলিকপ্টারের বেশ কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তালেবান যোদ্ধারা। যা ভাইরাল হতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
পরদিন (১৪ আগস্ট) আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বলখ প্রদেশের রাজধানী ও দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর মাজার-ই-শরিফও তালেবানের দখলে চলে যায়। সেই সঙ্গে এর বিমানবন্দরও। এ সময় এখানে বেশ কয়েকটি এ-২৯ যুদ্ধবিমান ও এমডি-৫৩০ ইউটিলিটি হেলিকপ্টার ছিল। এভাবে মাত্র কয়েক দিনে ১১টি বিমানঘাঁটি ও এর সব রসদ তালেবানের হাতে চলে আসে। চলতি বছরের জুনের শেষ দিকেও আফগান বিমানবাহিনীর কাছে হামলায় ব্যবহারযোগ্য হেলিকপ্টার ও বিমানসহ মোট ১৬৭টি এয়ারক্রাফট ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশনের (সিগার) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।
১৬ জুলাই তোলা উপগ্রহের এক ছবিতে কান্দাহার বিমানবন্দরে ৯টি ব্ল্যাক হক, দুটি এমআই-১৭ ও পাঁচটি ফিক্সড উইং বিমানসহ মোট ১৬টি এয়ারক্রাফট দেখা গিয়েছিল। তবে এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতগুলো তালেবানের হাতে পৌঁছেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এসব বিমানের মধ্যে বেশ কিছু ধ্বংস বা নষ্ট করা হয়েছে বলে দাবি করছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।
এসব এয়ারক্রাফট পেলেও তালেবানরা শেষ পর্যন্ত সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকেই সন্দিহান। ধারণা করা হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা হয়তো আফগান বিমানবাহিনীর অনেককে তাদের সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এয়ারক্রাফটগুলোর যন্ত্রাংশ, আধুনিকায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে তারা বিপাকে পড়বে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।