করোনা মহামারি পাল্টে দিয়েছে অনেক হিসাব-নিকাশ। থেমে গেছে জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি। অনেক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবশেষ করে চাকরিজীবনে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকে। অনেকেরই ইচ্ছা থাকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের; কিন্তু মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বহু সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশিত হয়নি। ফলে অপেক্ষায় থাকা অনেক চাকরিপ্রার্থীর বয়সসীমা ৩০ বছর ছাড়িয়ে গেছে বা যাচ্ছে। বিষয়টি সরকারেরও বিবেচনায় আছে।

তাই সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের বয়সসীমায় বড় আকারের ছাড় দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হতে পারে। তিনি অনুমোদন দেওয়ার পরই জানা যাবে সেই ছাড় কত মাসের হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ২১ মাস পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে বলে জানা গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে যাঁদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ ছাড়িয়ে গেছে বা যাচ্ছে তাঁরাই এই ছাড়ের সুবিধা পাবেন।

অন্যদিকে ২৫ মার্চের আগেও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যাঁদের এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেই সুযোগও বহাল থাকবে। তবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস পরীক্ষা এই বয়স ছাড়ের আওতায় থাকবে না। তার কারণ, করোনাকালেও বিসিএসের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ ব্যাপারে খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে। একই সঙ্গে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দিলে কিংবা পরিস্থিতি আবারও খুব খারাপ হয়ে গেলে কী করণীয় হবে তা-ও ভেবে দেখা হচ্ছে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। এই সংক্রমণ মোকাবেলায় ২৫ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। গত বছরের শেষ দিকে এবং এই বছরের প্রথম দিকে সংক্রমণ কিছুটা কম ছিল। এ বছরের এপ্রিল থেকে আবারও পরিস্থিতির অবনতি হয়। আবারও নানা পর্যায়ে লকডাউন বা কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। সর্বশেষ বিধি-নিষেধের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ ১০ আগস্ট। অথচ এরই মধ্যে সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী হাজার হাজার তরুণের সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছর পার হয়ে গেছে কিংবা পার হতে চলেছে।

নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে হতে হয়তো তাঁদেরও অনেকের বয়সসীমা পার হয়ে যাবে। অথচ তাঁদের অনেকেরই স্বপ্ন ছিল একটি সরকারি চাকরি পাওয়া। এখন বয়স বাড়ানো না হলে তাঁরা সারা জীবনের জন্য সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন—এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। করোনা পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ। সেটি আরো খারাপের দিকেও মোড় নিতে পারে। তাই আমরা আশা করি, সরকার সব দিক বিবেচনা করে চাকরির বয়সে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।