মুসলিমদের জন্য দিনটি আনন্দের। কারণ দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনের পর কাঙ্ক্ষিত এই দিনটি আসে। তাইতো দিনটিকে ঘিরে প্রত্যেক মুসলিমেরই খুশি আর আনন্দের সীমা থাকে না।
 
তবে এই দিন খাবার-দাবারের প্রতি একটু সতর্ক না হলে সব আনন্দই মাটি হয়ে যাবে। কারণ দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার ফলে আমাদের খাওয়া, ঘুম এবং অন্যান্য অনেক কাজে পরিবর্তন আসে। তবে ঈদের দিন থেকে আমরা আমাদের পুরানো রুটিনে ফিরে যাই।
 
যেহেতু একমাস আমাদের কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাই ঈদের দিন অনাকাঙ্ক্ষিত অসুস্থতা বা সমস্যা এড়াতে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তবেই দিনটিতে আপনি থাকবেন প্রাণবন্ত।
 
চলুন জেনে নেয়া যাক ঈদের দিন সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকতে আমাদের করণীয়-
 
* ঈদে রান্নায় অতিরিক্ত তেল মশলা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এক মাস সিয়াম সাধনার পর অতিরিক্ত তেল বা মশলাযুক্ত খাবার পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।
 
 
* মিষ্টি জাতীয় খাবার বুঝে শুনে খাবেন। যাদের ডায়াবেটিস, ইউরিক এসিড এবং ওজন বেশি তারা যথা সম্ভব সাদা চিনির তৈরি খাবার এড়িয়ে চলুন।
 
* দীর্ঘ এক মাস রোজা থাকার পর ঈদের দিন অনেক বেশি খাবার গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা বা বদহজম হতে পারে। তাই খাবার সময় অবশ্যই পরিমিতি বোধ বজায় রাখতে হবে। একবারে বেশি পরিমাণ খাবার না খেয়ে ছোট ছোট মিলে ভাগ করে খান।
 
* খাবার গ্রহণের ৩০ মিনিট আগে ২ গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন এবং ১৫ মিনিট পূর্বে ১ থেকে ১.৫ কাপ মিক্স সালাদ খুব ধীরে ধীরে খাবেন এতে করে খাবার সময় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের সম্ভাবনা কমে যাবে।
 
* ঈদের দিন দাওয়াতে গেলে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। মনে রাখবেন, দীর্ঘ এক মাস পর আবার আপনার স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসার সময় একটু ধীর গতিতে আসাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় ঈদের পরের দিন গুলোতে দাওয়াত গুলো রাখা।
 
* অনেকের বাড়িতেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি থাকতে পারেন। তাই ঈদের দিন রান্নার সময় অবশ্যয় তাদের কথা বিবেচনা করে রান্না করবেন। যেন ঈদের দিনে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য বা তাদের জন্য যে খাবারগুলো নিষিদ্ধ সেগুলো খেয়ে তারা যেন অসুস্থ হয়ে না পড়েন।
 
* যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ আছে তাদের রেড মিট এবং অর্গান মিট উভয়ই পরিহার করা উচিত।
 
* ঈদের দিন মাংসের নানা আইটেমের ভিড়ে শাকসবজি বা সালাদ খাবার কথা ভুলে গেলে চলবে না। মনে রাখবেন, ঈদের দিন হোক আর সাধারণ দিন হোক সুস্থ থাকতে হলে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ফাইবার বা খাদ্যআঁশ গ্রহণ করতে হবে।
 
* ঈদের দিন গরু, মুরগি বা খাসির মাংসের আইটেমই থাকে। এক্ষেত্রে রেড মিট বা লাল মাংসের আইটেমগুলো বাদ দিয়ে চিকেন আইটেম খেতে পারেন। এক বেলাতে এক সঙ্গে গরু খাসি বা মুরগি না খেয়ে তিন বেলায় ভাগ করে খেতে পারেন।
 
* ঈদে সব মাংসের আইটেম না করে মাছের আইটেম রাখতে পারেন। তিন বেলাতে মাংস না খেয়ে এক থেকে দুই বেলা মাছ খেতে পারেন। তবে প্রতি বেলাতে ৩০ থেকে ৪০ গ্রামের বেশি নয়। মাংস গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই।
 
* ঈদের দিন রান্নার পূর্বে মাংস থেকে অতিরিক্ত চর্বি কেটে ফেলে দিন এবং হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিন বাকি চর্বি চলে যাবে।
 
* যারা আইবিএস এর সমস্যাতে ভুগছেন তারা ঈদের দিন খালি পেটে দুধের তৈরি কোনো খাবার খাবেন না। ভালোভাবে নাশতা করার পর সেমাই বা দুধের তৈরি যেকোনো আইটেম খেতে পারেন। তবে অল্প পরিমাণে খাওয়া ভালো।
 
* যাদের ঘরে ২ বছরের কম বয়সি বাচ্চা আছে, তারা বাচ্চাকে গরুর মাংস এবং গরুর দুধের তৈরি কোনো খাবার না দিলেই ভালো করবেন। কেনেনা এই ধরণের খাবার হজম করতে স্টোমাকের যে পরিপক্কতা থাকার দরকার তা শিশুদের থাকেনা। ফলে এই ধরণের খাবার খেলে শিশুদের পেটের সমস্যা হতে পারে।
 
* সুস্থ থাকতে ঈদের দিন থেকেই শুরু করুন অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়ামের অভ্যাস। এতে আপনি সুস্থ থাকবেন।