সমাধান/প্রতিকার/চিকিৎসা কী?

সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশন (Sexual Frustration) হচ্ছে যৌন চাহিদা আর মেটানোর পার্থক্য। আরও বিশদভাবে বললে, একজন ব্যক্তি তার যৌনক্ষুধা চাহিদামত মেটাতে না পারলে তার মধ্যে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাই সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশন বলে অভিহিত।

এটি আসলে কোন মানসিক রোগ না। ক্রিমিনোলজিতে এই টার্মটি ব্যবহার হয় কি না জানি না।

সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনের কারণ:

যৌন চাহিদা মানুষের স্বাভাবিক একটা প্রবৃত্তি। মানুষ অন্য একজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথে পারস্পরিক সম্মতিতে সেক্স করে কিংবা হস্তমৈথুন করে এই চাহিদা মেটায়। যখন কেউ এভাবে যৌন চাহিদা মেটাতে পারে না, তখনই সে সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনে ভোগে।

আমাদের দেশের সামাজিক এবং ধর্মীয় কারণে বিবাহবহির্ভূত যৌনতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। পশ্চিমা বিশ্বে অবশ্য সামাজিকভাবে স্বীকৃত হওয়ায় প্রাপ্তবয়স্ক হলেই মানুষ বিয়ে ছাড়াই যৌনতায় লিপ্ত হয়, তাই তাদের সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশন কম।

আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৮-১৯ বছর বয়সে নারীসঙ্গ পাওয়ার সুযোগ নেই বলে এবং অনেকে ৩০ বছর বয়স হয়ে গেলেও বিয়ে করতে পারে না বা পরিবার বিয়ের ব্যবস্থা করে না বলেও অনেকে সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনে ভোগে।

যদিও অনেকে কৌতুহল বশত বা আবেগবশত পতিতালয়ে গিয়ে কিংবা কাজিন, কাজের মেয়ের সাথে সেক্স করে। অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা বিয়ে না করেও সেক্স করে। কিন্ত যারা নৈতিকভাবে চিন্তা করে বলে তারা এভাবে করতে পারে না ফলে তাদের অনেকের মধ্যে সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশন জেগে উঠে।

অনেকে তাড়াতাড়ি বিয়েকে এর সমাধান মনে করেন। কিন্তু, বিয়ে করলেও একপক্ষের যৌন অক্ষমতার কারণে, চাকরির জন্য দূরে অথবা দেশের বাইরে থাকলে অন্য পক্ষও সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনে ভোগে।

নির্ণয়ের উপায়:

এটি নির্ণয়ের কোন উপায় নেই। তবে যেসব পুরুষ এমনকি অনেক নারীও অনলাইনে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে অশ্লীল কিছু পাঠায়, রাস্তা ঘাটে যৌন হয়রানি করে, ধর্ষণ করে, শিশু ধর্ষণ করে মূলত এরাই সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড। এছাড়াও যেসব বিবাহিত ব্যক্তি পরকীয়া করে, পতিতালয়ে যায়, অথবা অন্য নারী বা শিশুকে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, নিয়মিত বিরতিতে ধর্ষণ করে, এরাও সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড।

সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনের প্রতিকার:

১. কিশোর বয়সে সঠিক যৌনশিক্ষা প্রদান। অনেকে যৌনশিক্ষা বলতে সেক্স করা শেখানো বোঝে। আসলে তা নয়। সঠিক যৌনশিক্ষা দিলে, ঝুঁকিপূর্ণ সেক্স, বিবাহবহির্ভূত সেক্সের কূফল সম্পর্কে যেমন জানতে পারবে, নিজেকে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা করতে পারবে।

২. শিশুদের গুড টাচ, ব্যাড টাচ শেখানো। কোন শিশু যদি কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তা গুরুত্ব সহকারে শোনা।

৩. পর্ণোগ্রাফি, চটি সাহিত্যের কূফল সম্পর্কে জানানো।

৪. পুরুষদের বিয়ের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ করা এবং সেই বয়সে আর্থিক সামর্থ্য থাকলে বিয়ের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি বিয়েতে অতিরিক্ত খরচ করার মানসিকতা পরিহার করা।

৫. বিয়ের পর যদি কারও যৌন অক্ষমতা ধরা পড়ে তাহলে লজ্জা সংকোচ না করে তার যথাযথ চিকিৎসা করা।

৬. পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ করা এবং পতিতাদের সম্মানজনক পূনর্বাসন করা। পাশাপাশি যারা নারী শিশুদের পাচার করে পতিতালয়ে বিক্রি করে তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।

৭. সবরকম ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানির বিচার করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া।

৮. আমরা যৌনতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে আমাদের যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।