আমার কিছুই ভালো লাগে না। প্রতিটি দিন কিভাবে যে, কেটে যাচ্ছে। নিজেকে বিরক্ত লাগে। জীবনের মানে খুজে পাই না। সুখ পাইনা, আনন্দ পাইনা কিছুতেই। উপরের কথা গুলো বলতে বলতেই জীবনের মূল্যবান সময় গুলো আমরা পার করে দেই।

আমরা কি একটুও চিন্তা করি না, আমাদের জীবনটা কত ছোট। কত সল্প সময় পেয়েছি আমরা বেচে থাকার জন্য। একটু ভেবে দেখুনতো কত মানুষ মারা গেছে, শত বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেই লোক পৃথিবীতে বেচে ছিলো মাএ পঞ্চাশ বছর। আপনি এই লেখাটা পড়তে পড়তে যদি মারা যান তবে এই পৃথিবীর কোন হ্মতি হবে না। আপনাকে যারা মাটি দিতে যাবে, তারা বাসায় এসেই গোসল করে ভাত খেতে বসে যাবে। আপনাকে ছাড়া বাচবেনা বলা মানুষটাও, আরেকটা হাত খুজবে। আপনাকে ছাড়া কোথাও বেড়াতে না যাওয়া বন্ধুরাও, আপনি মারা যাবার পরের মাসেই কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার প্লান করবে।

আপনি না পড়ালে অন্যকারো কাছে পড়বে না বলা স্টুডেন্টও, আরেকটা টিচার খুজবে। আপনার ব্যবহার করা জামা কাপড় গুলা থেকেও আপনার শরীরের ঘ্রান উঠে যাবে। আপনার প্রতিবেশী মানুষ গুলাকে কিছুদিন পরে আপনার নামটা জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারবেনা, ভুলে যাবে। আপনার মা বাবা ভাই বোন কেউ থেমে থাকবেনা। আপনি মরে গেলে, নিজেও মরে যাবে বলা আপনার ছোট ভাইটাও দিন পনেরো পর থেকে, স্কুলে যাবে। আপনার বাবা দিন সাতেক পর থেকে নতুন করে ব্যবসায়ের হাল ধরার জন্য আবার নিয়মিত হবেন। আপনার মায়ের কান্না মাখা মুখটাও, ঠিক হবে একটা সময়।

সব চাইতে বেশী দিন মনে রাখবে এই একটা মানুষ আপনাকে। তবে থেমে থাকবে না কিছুই। তিনিও রোজ সকালে আপনার বাবার জন্য রুটি বেলবেন আপনার ছোট ভাইয়ের টিফিন বক্সে দুইটা রুটি আর ডিম দিতে দিতে, আপনার কথা বলবেন, খুব পছন্দ করতো ডিম ভাজা। কাদবেন কিছু হ্মন। আবার দুপুরের রান্না চাপতে চলে যাবেন। কেউ থেমে থাকবেনা।

থেমে থাকবেনা আপনার নিজ হাতে লাগানো গোলাপ ফুল গাছের গোলাপ গুলো বা বাড়ির পিছনের নারিকেলের গাছটাও। আপনার কাচা মাটির কবরের মাটি ও একদিন শুকিয়ে যাবে। দিন যাবে, বছর যাবে। সবাই সবার মত ব্যস্ত হয়ে যাবে। কেউ মনে রাখবেনা আপনাকে। দুনিয়াতে কেউ কাউকে মনে রাখে না। রাখার প্রয়োজন ও নেই। আপনার জীবনটা একান্তই আপনার। এই সামান্য জীবনের প্রাপ্তি হচ্ছে আপনি নিজের জন্য কতটা সময় ব্যয় করলেন।

নিজেকে কতটা ভালোবাসলেন। একটু লহ্ম করলে দেখতে পাবেন, আমাদের জীবনটা শেষ হয়ে যায় অন্যকে খুশি করতে করতেই। বাবা মাকে খুশি করো। স্কুলের শিহ্মকদের খুশি করো। রিলেটিভদের খুশি করো। অফিসের বসকে খুশি করো। জামাই বউকে খুশি করো, বউ জামাইকে খুশি করো। বাচ্চা-কাচ্চদের খুশি করো। নাতি নাতকুরদের খুশি করো। সবাইকে খুশি করার নেশায়/দায়িত্বে, শেষ করে ফেলি জীবনের মূল্যবান সময়টুকু। হ্যাঁ এইটাও সত্য অনেকেই আছে, যারা আমাকে খুশি করায় ব্যস্ত। আপনাকে কেউ সুখী করতে পারবে না যতহ্মন না আপনি নিজে নিজেকে সুখী হিসেবে মেনে না নেন। এখন আপনি বলবেন আমার সুখ কোথায়।

আমি যে সকল জিনিসে সুখ পাই, তাতো নাই আমার কাছে। হ্যাঁ এইটাই সবচাইতে বড় বাধা। চাহিদার নেশা আমাদের সুখী হতে দেয় না। আমরা সবাই মনে করি আমাদের কাছে যা নাই, তাই আমাদের সুখ। আমাদের যদি বাড়ি না থাকে তাইলে মনে করি, বাড়িটাই আমাদের সুখ। বাড়ি হওয়ার পর বাড়িতে আর সুখ পাইনা। তখন মনে হয় একটা দামি গাড়ি হইলে কত ভালো হতো। একটা গাড়ি হইলেই আমি সুখী। গাড়ি হওয়ার পরে মনে হয়, কই গাড়িতেও সুখ নাই। একটা দামি মোবাইলে হয়তো সুখ, মোবাইল হওয়ার পরে হবে, কই দামি মোবাইলেও তো সুখ নাই।

আসলে সব কিছুতেই সুখ বিদ্যমান তবে সব সুখের একটা ইন্ডিং লাইন আছে। একটা সময় আর ভালো লাগে না। কারন মানুষের চাহিদার কোন লিমিটেশন নাই। কিসে সুখ, কিসে আনন্দের খুজতে খুজতে, আমরা এসে পরি জীবনের ধার প্রান্তে। একটা সময় চাহিদা শেষ হয়ে যায়। তখন শুরু হয় অনুতাপ। কি করলাম জীবনে।কোথায় শেষ করলাম আমার ষাট বছর বয়স। সুখ খুজতে খুজতে ষাট শেষ, আর মারা যাবার আগের দিন গুলো কেটে যাবে কেনো আমি সুখী হলাম না। আমি কি ব্যর্থ? এই অনুতাপ করতে করতে। আমরা ফিউচার ভাবতে পারি, কিন্তু গিয়ে দেখতে পারি না কি হবে সামনে।

এখন আমরা যে সময় গুলো বলছি অভিশপ্ত বছর, অভিশপ্ত সময়, ফিউচারে তো এর চাইতেও খারাপ কিছু অপেহ্মা করতে পারে আমাদের জন্য। তাইলে কেনো আজকের দিনটায় বলছি, আমার কিছু ভালো লাগে না।

কেনো বলছি আমার লাইফটা বোরিং। আপনার জীবনের প্রতিটা সেকেন্ড মূল্যবান। এক সেকেন্ড করে করে কমে যাচ্ছে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময়। আপনার আশে পাশে কখনো ভালো করে তাকিয়েছেন? ছোট থেকে দেখে আসছেন একই গাছ, একই মাঠ, একই মানুষ একই নদী একই নীল আকাশ। এখনো ফিল করেছেন এর প্রয়োজনীয়তা? এর সৌন্দর্য? কখনো নদীর পাশের, খোলা মাঠে নীল আকাশের নিচে দারিয়ে বাচ্চা সহ গাভীকে ঘাস খেতে দেখেছেন? কখনো গভীর রাতে তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়েছেন? বৃষ্টি ভেজা গ্রাম্য পথের কাদা মাটির গন্ধ নাকে নিয়েছেন? হেটেছেন এমন কোন পথে যেখানের রাস্তাটা গিয়েছে অনেক দূরে। আশে পাশে নেই বশতি ।

এক পাশে নদী তার অন্য পাশে শত বছরের পুরোনো বট গাছ। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চোখ বন্ধ করে পাখির কিচির মিচির শুনেছেন? বর্ষা রাতে বেঙের ডাক শুনেছেন? শীতের সকালে চাঁদর গায়ে অচেনা পথে হেটেছেন? একা একা খোলা আকাশে রাতের চাদের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কত সুন্দর তার আলো? ঝড়ের দিনে সবার সাথে পাল্লা দিয়ে আম কুড়িয়েছেন? তুফান নামার আগের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কখনো এর সৌন্দর্য? হয়তো করেছেন।

হয়তো বলছেন এর মধ্যে কিসের আনন্দ? কিসের সুখ? এইগুলা আছে বলেই আপনি দেখতে পাচ্ছেন। এই সৌন্দর্য সবসময় ছিলো। থাকবে। থাকবেন না আপনি আর আমি। আমাদের আশেপাশেই বিদ্যমান হাজারো ভালোলাগা। এইগুলা একটু কষ্ট করে খুজে নিতে হবে আপনাকে। আপনাকে আপনিই খুব ভালো চিনবেন। কিসে সুখ নিহিত আপনার আপনাকে কেউ খুশি করবেনা কেউ আপনাকে সুখ দিবে না। আপনাকে আপনি নিজের মত করে ভালোবাসুন।

জীবন একটাই, বাচুন নিজের জন্য। বেচে থাকার মত আনন্দের আর কি হতে পারে? নিজেকে সময় দিন। এর পরে যখন বলবেন আমার ভালো লাগে না, কিচ্ছু ভালো লাগে না একটা বার চিন্তা করুন এখন থেকে দুইশত বছর আগে আপনার বংশে আপনার কোন রক্তের ভাইও মাঠে ধান তুলতে তুলতে বলতো, “আমার কিচ্ছুই ভালা লাগেনা” কোথায় সে আজ? কোথায় তার ভালোলাগা? কোথায় তার খারাপ লাগা? তার খারাপ লাগার কারন গুলো আর আপনার খারাপ লাগার কারন গুলো কিন্তু প্রায়ই একই। আমরা কেউ বেচে থাকবো না। আমাদের ভালোলাগা, খারাপ লাগায় কারো কিছু আসে যায় না।

দিন শেষে সবাই স্বার্থপর। সবাই নিজেই চিন্তায় চিন্তিত। আজ থেকে নিজেকে সময় দিন। নিজের ভালোলাগা খুজে বের করুন। একটা কথা মাথায় রাখবেন সুখ কুড়ানো ভুল নয়। ভুল হচ্ছে জীবনের সবটা সময় সুখ কুড়িয়ে সেই সুখ ব্যবহার করার সঠিক সময় হারিয়ে ফেলা।

আফসোস আমরা সুখ কুড়িয়েই গেলাম। “বৃদ্ধ বট গাছটার পাশ দিয়ে অনেকেই হেটে যাবে। কেউ শুধু হেটেই যাবে, আবার কেউ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকবে গাছটার দিকে। তাকিয়ে থেকে কি চিন্তা করে মুচকি হাসবে, সেইটা আমাদের অজানা তবে এতেই হয়তো তার সুখ। এতেই হয়তো তার আনন্দ