ঠাণ্ডায় নানারকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। সাধারণ সর্দি-জ্বর, কাশি থেকে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। আর প্রচণ্ড শীতের ধকল সইতে না পেরে প্রতি বছরই মারা যায় বহু শিশু ও বয়ষ্ক মানুষ।
মূলত শরীরে যখন রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে তখন সামান্য কারণেও মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তাই জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
এজন্য নিয়মমাফিক দৈনন্দিন জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও প্রতিদিন যোগব্যায়াম করা জরুরি।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, রক্তসঞ্চালন সুষম করা ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য অর্থাৎ ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে এই ১০টি যোগাসন খুব কার্যকর – উত্তানাসন বা পদহস্তাসন, অধোমুখ স্বনাসন, অর্ধ মৎস্যেন্দ্রাসন, সেতুবন্ধাসন, উষ্ট্রাসন, সালম্ব শীর্ষাসন, হলাসন, বিপরীতকরণী, ধনুরাসন ও শবাসন।
এর সঙ্গে সূর্য অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করবে।
পদ্ধতি
পদ্মাসন, সিদ্ধাসন বা সুখাসনে মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে। এবার ডান হাতের অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে নাকের বাম দিকে আলতো করে চেপে ছিদ্রপথ বন্ধ করতে হবে। ডান ছিদ্রপথে ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং একই পথে ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন। এভাবে চর্চা করুন ৩ থেকে ৫ মিনিট। এই প্রাণায়াম আমাদের শরীর উষ্ণ করে এবং ওজন কমাতে অর্থাৎ মেদ কমাতে সহায়তা করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণায়াম প্রতিদিন খালি পেটে সকাল-সন্ধ্যা মাত্র ১ মিনিট করেও যদি চর্চা করেন, তবুও আপনি বেঁচে যাবেন সামান্য ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে মরণঘাতী বহু রোগ থেকে। এর নাম কপালভাতি প্রাণায়াম।
প্রক্রিয়া
• খালি পেটে সিদ্ধাসনে বা পদ্মাসনে বসে দুই হাটুর ওপর দুই হাত ধ্যানমুদ্রায় রাখুন। এটা না জানলে এমনিতেই হাত দু’টি দু’হাঁটুর ওপর রেখে সুখাসনে বসুন।
• মেরুদণ্ড সোজা ও চোখ বন্ধ রেখে বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ করুন।
• এরপর সজোরে শ্বাস ত্যাগ করুন। নাকের ভেতর হঠাৎ ময়লা বা পোকা ঢুকে গেলে আমরা যেমন সজোরে শ্বাস ত্যাগ করে অবাঞ্ছিত বস্তুটাকে বের করতে চেষ্টা করি, সেরকম সজোরে শ্বাস ত্যাগ করতে হবে।
• আবারও শ্বাস গ্রহণ করুন ফুসফুস ভরে। খেয়াল করুন আপনার পেট ফুলে কিছুটা উঁচু হয়ে উঠবে। এবার সজোরে শ্বাস ত্যাগ করুন। খেয়াল করুন আপনার পেট গভীরে ঢুকে যাবে এসময়।
• সাবধান থাকতে হবে যে, শুধুমাত্র শ্বাস ত্যাগ করতে হবে সজোরে। কিন্তু গ্রহণ করতে হবে স্বাভাবিকভাবে।
• শ্বাস গ্রহণ করার সময় কোনো সতর্কতা বা জোর খাটানোর প্রয়োজন নেই। ডায়াফ্রামের ক্রিয়ায় ফুসফুস এমনিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনীয় বায়ু ভেতরে টেনে নেয়। আপনার কাজ শুধু সজোরে ত্যাগ করা। আপনার মনোযোগ থাকবে শুধুমাত্র শ্বাস-প্রশ্বাসে।
• যখনই আপনার কষ্ট অনুভব হবে, তখনই থেমে যাবেন। জোর করে প্রাণায়াম করবেন না।
• একটু বিশ্রাম নিন। তারপর আবার অনুশীলন করুন।
• এসময় আপনার মেরুদণ্ডের নিম্নভাগে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। একটু থামুন। বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করুন কয়েকবার। দেখবেন ব্যথা ঠিক হয়ে গেছে। তারপর আবার অনুশীলন করুন।
• এসময় আপনার মুখমণ্ডল, কান, মাথা উষ্ণ হয়ে উঠবে। সারা শরীরে দারুণভাবে রক্তপ্রবাহ সঞ্চালিত হবে।
• প্রাণায়াম শেষে চোখ বন্ধ রেখেই শরীরের মাঝে যে নির্মল অনুভূতি লাভ করবেন, কিছুক্ষণ সেটা উপভোগ করুন।
• এবার দুই হাতের তালু ঘষে তাপ উৎপন্ন করে চোখে-মুখে মেখে নিন।
• এই গোটা প্রক্রিয়া কমপক্ষে ১ থেকে ২ মিনিট অনুশীলন করাই যথেষ্ট। তবে প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট করতে পারলে ভালো। অভ্যস্ত হয়ে গেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত এটা প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে।
• অসুস্থ শরীরে, গর্ভাবস্থায়, মাসিক চলাকালীন বা অস্ত্রোপচারের পর এই প্রাণায়াম করা যাবে না।
এই কপালভাতি প্রাণায়ামের উপকারিতা অপরিসীম। এখন শুধু এতটুকু বলে রাখি, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা আপনার ধারে-কাছে আসবে না। নিয়মিত প্রাণায়াম ও যোগাভ্যাস করুন। জীবনকে উপভোগ করুন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।