প্রতিটি মানুষের মাঝেই আবেগ আর অনুভূতি আছে। এগুলো না থাকলে আমরা হয়তো ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পারতাম না। আরও একটি বিষয় যা আমাদের মানুষ করেছে, তা হল ভুল করার প্রবনতা। আগেই বলা হয়েছে, মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃতির নিয়মে বাঁধা নয়। সে তার নিজের মত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কাজ করতে পারে, জীবনের পথ বেছে নিতে পারে।

 

আর এই স্বাধীনতাগুলো অনেক সময়েই মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়। অনেক সময়েই এই ভুলগুলো আমাদের মনে অন্যদের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করে। অনেক ঘৃণা আমরা সারাটা জীবন বয়ে বেড়াই। ঘৃণা এমন একটি বিষ যা কামনা করে অপরের ধ্বংস, কিন্তু আমরা টেরও পাইনা, আমরা নিজেরাই নিজেরাই এর ফলে নি:শেষ হয়ে যেতে থাকি।

 

অনেক সময়ে কোনও মানুষ, কোনও গ্রোত্র বা জাতির প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকি, যাদের সাথে আমাদের হয়তো জীবনে কোনওদিন সরাসরি দেখাই হবে না। তারা তাদের মত থাকে, কিন্তু মাঝথেকে ঘৃণার আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আমরা নিজেরা নিজেদের কষ্ট দিই। অনেক সময়ে একজন মানুষ তার নিজের ভুল বুঝতে পারলেও আমরা তাকে ঘৃণা করা বন্ধ করতে পারি না। এতেকরে আমরা আমাদের অপরিসীম ক্ষতি করে ফেলি।

 

গডফাদার সিনেমার একটি বিখ্যাত সংলাপ আছে: “Never hate your enemies, it affects your judgment” – তাহলে দেখা যাচ্ছে শত্রুকেও যদি আমরা ঘৃণা করি, তাহলে তা আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেচনা কাজ করে না, এরফলে আমরা অনেক সময়েই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

 

তাই কেউ যদি তার ভুল বুঝতে পারে, আমাদের উচি‌ৎ তাকে ক্ষমা করে দেয়া। এমন কারও প্রতি ঘৃণা পুষে রেখে দিন পার করা উচি‌ৎ না যার কাছে পৌঁছানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারথেকে বরং মনযোগ দেয়া উচি‌ৎ নিজের ও আশপাশের মানুষের উন্নতি ও শান্তির দিকে। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ এসেছেন, সবাই আমাদের বলেছেন শান্তির পথ বেছে নিতে।

 

কারন এই মহান মানুষগুলো খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন, ঘৃণা শুধু একজন মানুষ ও তার আশপাশকে ধ্বংসই করতে পারে। ঘৃণার ফলাফল কখনও ভাল হয় না। ন্যায় বিচারের জন্য ঘৃণা পুষে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই, অপরাধ যে করেছে, বিচার তার হবেই। আজ অথবা কাল। কাজেই ঘৃণা পুষে রেখে নিজেকে কষ্ট দেয়ার থেকে নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকাই পরিপূর্ণ জীবন যাপনের উপায়।