তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমার মনে হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। কারণ উনার বয়স হয়েছে, বয়স হলে অনেক ধরনের আবোল-তাবোল কথা মানুষ বলে, এজন্য তাদের ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাবের উচিত তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কিছু পরীক্ষা করা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের দেওয়ানজীপুকুর পাড়স্থ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে এই মন্তব্য করেন তিনি।

দেশে গণতন্ত্র নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের মন ভালো নেই, তাই দেশের মানুষ ভালোভাবে ঈদ করতে পারেনি-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির পর দেশে এবার যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের মানুষ ঈদ করেছে সেটি অভাবনীয়। শুধু তাই নয়, এ বছর দেশের মানুষ যেভাবে কেনাকাটা করেছে, সমস্ত ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড খুশি এবং দেশের অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। এবার দেশে ঈদযাত্রা অনেকটা ভোগান্তিহীন ছিল। সেজন্য মানুষ খুশি। মানুষের মধ্যে এখনো খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মির্জা ফখরুল সাহেব সম্ভবত অন্য গ্রহে বসবাস করেন। অথবা তার মাথার মধ্যে অন্যদেশ ঘুরপাক খায়।
তথ্যমন্ত্রী বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ফ্রন্টিয়ার্স (আরএসএফ) এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তাদের প্রতিবেদন বিদ্বেষপ্রসূত, আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য। আরএসএফ একটি প্যারিস বেইজড অরগানাইজেশন।

এই সংস্থা সব সময় বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তারা গতবছর এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিল। তারা বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে অসত্য, ভুল এবং মনগড়া রিপোর্ট করে। সেটার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বৃহত্তর সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো যেমন প্রতিবাদ জানিয়েছিল, একইভাবে প্যারিস প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি ফ্রান্সের আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছিল। আইনি নোটিশে বলা ছিল, তারা কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের ব্যাপারে এ রকম মন্তব্য করতে পারে না, ফ্রান্সের আইনেই সেটি বলা আছে। তারা ফ্রান্সের আইন লঙ্ঘন করে সেটা করেছে। সুতরাং তারা এখন যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে সেই সমস্ত সূত্র থেকে তারা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে এবং নিজেরাও বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে যে রিপোর্ট দেয় সেটির কোনও মূল্য নেই। গতবছর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ (বিএফইউজে) সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তাদের সেই প্রতিবেদন ও মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল প্রকাশ্যে, বিবৃতি দিয়েছিল।

তিনি বলেন, সেই একই সংগঠন আবারো যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে কথা বলে তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিতে হবে সেই সংগঠনটা ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনগুলো দিচ্ছে। তারা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়েও বলেছে।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বিষয়টি যখন ছিল না তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও ছিল না। যখন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল বিষয়টি এসেছে, তখন গণমানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ আইন করেছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই আইন হয়েছে এবং হচ্ছে। সিঙ্গাপুর, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এই আইন হয়েছে।

‘এই আইন সব মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। এই আইনের সুযোগ গ্রহণ করে অনেক সাংবাদিকও তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর অনেক কিছু করার জন্য মামলা করেছে। অবশ্যই সাংবাদিক হোক, সাধারণ মানুষ হোক কারো বিরুদ্ধে এই আইনের অপব্যবহার হওয়া উচিত নয়, সে নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ বাংলাদেশে যেসমস্ত ধারাগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, কেউ কেউ সমালোচনাও করেন সেই ধারাগুলো ভারত পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে যে আইনগুলো হয়েছে সেখানেও অনুরূপ ধারাগুলো সন্নিবেশিত আছে’।

তিনি বলেন, এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফ্রেইম ওয়ার্ক ল করছে, যেটার অধীনে বিভিন্ন দেশে পদক্ষেপ নেয়া হবে, আইন করা হবে। ফ্রান্সেও একই ধরনের আইন আছে। সুতরাং আরএসএফ’র এই প্রতিবেদন বা বাংলাদেশকে কয়েক ধাপ নামিয়ে দিল তারা বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হয়েই, তারা আগে থেকেই যেহেতু বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত-সেজন্যই এ কাজটি করেছে। আমরা এটি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি।