ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদীর গতিপথ বন্ধ করে রিসোর্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসি সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকসহ কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারই প্রেক্ষিত প্রশাসনিক ভাবে একটি গঠিত কমিটির শঙ্কা রিসোর্টি নির্মান হলে ব্রীজের উভয় পাশে সাতটি স্প্যানের মুখ বন্ধসহ নদীর গতিপথ পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্নস্থানে ভাংগন দেখা দিবে।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফেসরাডাঙ্গী ব্রীজের নিচের অনেকটা অংশে মাটি ভরাট করে ব্যাক্তি উদ্যোগে শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেড নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। যা সম্পুর্ন জমি রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বলে দাবি উদ্যোগতাদের।
রিসোর্টটি রক্ষায় অনেকটা তরিঘরি করে বাঁধ নির্মাণের জন্য নিজেরাই ব্লক ও বাঁধ তৈরি করছেন। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বাড়লে তা উপচে আশেপাশের কৃষি জমির ফসল নস্টের আশংকা করছেন কৃষকরা। এতে ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করেছেন তারা।
জানা গেছে, টাংগন নদীর উপড় ফেসরাডাঙ্গী ব্রীজ সংলগ্ন ৯ একর জমির উপর ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যক্তি মালিকানা উদ্যোগে এ রিসোর্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
আর সেকারনে এলাকার জমি, ফসল, বসতভিটা রক্ষার দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা গত ০৬ ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ণ বোর্ড,উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডিসহ কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন।
অন্যদিকে প্রকল্প শুরুর আগে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ সালে নদীর সীমানা মাপযোগে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেছিলেন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমানের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
কয়েকদিন পর ওই কমিটি জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেন। কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগেই রিসোর্ট নির্মানের কাজ শুরু করেন উদ্যোতারা।
গঠিত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে মাটি ভরাট করেছেন তাতে ফেসরাডাঙ্গী ব্রিজের বারোটি স্প্যানের মধ্যে উভয় পাশের সাতটি স্প্যানের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে নদীর তীরে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক গিয়াস উদ্দিন,হামিদুর রহমান, ফজির উদ্দিনসহ অনেকে জানান, নদীর উপর রিসোর্ট নির্মান হলে বন্যার সময় কৃষি জমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তবে মানুষের ক্ষতি করে নয়। গরীব মানুষের ঘরবাড়ি ও কৃষি জমির কথাও ভাবতে হবে। অনেকেই নিজ জমিতে নদীর ধারেই পুর্বপুরুষের ভিটে মাটিতে বসবাস করছে। এমনিতেই বর্ষায় টাঙ্গন নদী ফুলে ফেপে উঠে। এমন অবস্থায় নদীর গতিপথে বাঁধা সৃষ্টি করা হলে গোটা গ্রাম নদীতে চলে যাবে। বেকার হয়ে পরবে এলাকার কৃষক। ভিটে ছাড়া হবে কয়েক’শ পরিবার। এ অবস্থায় রিসোর্টটি নির্মানের আগেই জেলা প্রশাসনসহ সরকারের হস্তক্ষেপ চান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন কামালের দাবী নদী তাদের জমির উপর দিয়ে বয়ে গেছে। তারা নিজস্ব জমিতে রিসোর্ট নির্মান করছেন। নদীর জমি ভরাট করা হয়নি বরং তাদের জমি ভরাটের কারণে ব্রিজটি রক্ষা পাবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান জানান, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিস্ট দপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দাখিলকৃত প্রতিবেদন দেখে দ্রুতই ব্যবস্থায় উদ্যোগ নেয়া হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।