বাগমারা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বেসরকারি ক্লিনিক মোহনা নার্সিং হোমে আবারো নবজাতকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।এর প্রতিবাদে রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকে জমায়েত হলে স্থানীয় প্রভাবশালী ও বখাটেদের মাধ্যমে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আপসরফায় বসতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিক মালিক লোকমান হাকিমের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার উপজেলার মিরপুর গ্রামের তাজির আলী ছেলে আতিকুর রহমানের স্ত্রী সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন মোহনা নার্সিং হোমে। রোগীর স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, মোহনা ক্লিনিকের নিজস্ব কোন ডাক্তার নাই। অপারেশনের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রোগী ও নবজাতকের অবস্থার অবনতি হলে বাচ্চাটিকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। নবজাতকের শারীরির অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে গত রবিবার নবজাতকের মৃত্যু হয়।
মৃত নবজাতকের দাদা তাজির আলি এই প্রতিবেদককে জানান, তারা গরীব মানুষ, ক্লিনিক মালিক লোকমান হাকিমের সাথে সিজার সহ যাবতীয় কাজের জন্য মোট আট হাজার টাকায় মৌখিক চুক্তি করেন তিনি। অপারেশনের আগেই প্রায় তিন হাজার টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও রোগীর রক্ত লাগবে বলে মোট নয়জনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে তারা। বাচ্চাটা এভাবে মারা গেল, তাকে রাজশাহী হাসপাতালে নিতে দুই হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া সহ আনুষঙ্গিক আরো খরচ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তারপরও আজ রোগী রিলিজের সময় ক্লিনিক মালিক আরো আট হাজার টাকা দাবি করে বসেন তার কাছে। এতো টাকা দিতে অপারগতা জানালে স্থানীয় লোকজন ডেকে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে তিনি জানান। পরে স্থানীয়রা তিন হাজার টাকায় রোগীর ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় বলে তাজির আলি জানায়।
জানা গেছে তাজির আলীর পুত্রবধূর অপারেশন পরিচালনা করেন ডাঃ সারোয়ার ইসলাম নামের এক চিকিৎসক। তিনি মূলত এনেসস্থেসিয়া প্রদানের যোগ্যতা সম্পন্ন হলেও কোন সার্জারি বিশেষজ্ঞ নন। অথচ বাগমারা বিভিন্ন ক্লিনিকে দিব্বি সকল ধরনের অপারেশন করে থাকেন। ইতিপূর্বেও তার বিরুদ্ধে বাগমারার বিভিন্ন ক্লিনিকে একাধিক রোগী মৃত্যুর মত দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকা পয়সার বিনিময়ে সেই ঘটনা গুলো ধামাচাপা দেওয়া হলেও অব্যাহত রয়েছে ডাঃ সারোয়ারের অপকর্ম। এবিষয়ে কথা বলতে ডাঃ সারোয়ারকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মোহনা ক্লিনিকের মালিক লোকমান হাকিম জানান, বাচ্চাটির অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল।শ্বাস নিতে পারছিল না। অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল।পরে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী রেফার্ড করি। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোন অবহেলা ছিল না বলে তিনি জানান।
বাগমারা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবাইদুর রহমান জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, লোকমান হাকিম ও তার স্ত্রী কয়েক বছর পূর্বেও একজন ডাক্তারের কম্পাউন্ডার ও ক্লিনিকের কর্মচারী হিসেবে দিনহীন জীবন যাপন করতো। কিন্তু সে ও তার স্ত্রী মিলে কথিত নার্সিং হোম খুলে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে।ভবানীগঞ্জ বাজারে পাঁচতলা ভবন করে সেখানে ক্লিনিক করেছে তারা। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ গর্ভপাত ও ডাক্তার ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি জমি দখল করে তার ক্লিনিক কম্প্লেক্সের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে লোকমান হাকিমের বিরুদ্ধে।
লোকমান হাকিম সব সময় স্থানীয় দালাল ও মাস্তান টাইপ লোকজন এবং প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে তার অপকর্ম পরিচালনা করে বলে কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস করে না। ভুক্তভোগীদের কেউ মুখ খুলতে গেলে তার ভাড়াটে মাস্তানদের লেলিয়ে দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম রাব্বানী বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ পেলে মোহনা নার্সিং হোম এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।