মায়াবতী                                  লিটন রায়


শেষ বার যখন ওর সাথে দেখা হয়েছিলো।তখন সে আমাকে কিছুই মুখ ফুটে বলতে পারিনি।তখন সে বিয়ের কার্ড নিয়ে আমার কাছে এসেছিলো।চোখ জোড়া পানিতে ছলছল করছিলো।

আমি তাঁর কান্নার কারণটা বুঝতে পারিনি।বুঝতে
পারনি তাঁর মনের ব্যথাটুকু।আমি আসলেই বোকা ছিলাম। তাই সবকিছুই নিরবে শুনে গিয়েছিলাম।

কান্না জড়রিত কন্ঠে আমায় বললো,,,,,
” জানো আমার না বিয়ে। তুমি আমার বিয়ের দিন কি করবা। আর শুন একটু ফিটফাট হয়ে এখন থেকে চলাফেরা করবা।সবসময় তো এলোমেলো ভাবে চলো।আমিই সব ঠিক করে দিতাম। এবার না হয় একা একা সবকিছু করতে শিখ”।ঠিক সকালে ঘুম থেকে উঠবে,সময়মত খাবে,আর
বেশি রাত জাগবে না কিন্তু। আমি কিন্তু দুর থেকেই সবকিছুই দেখতে পাবো।আর হ্যা পড়াশুনাতো প্রায় শেষ, এবার একটা চাকরি জোগাড় করার চেষ্টা কর।আমার তোমার সেই চাকরি দেখার ভাগ্যটা হলনা।এবার কিছু একটা করে দেখাও সবাইকে। যেন সবাই বলতে পারে,তুমি আমার কতটা উপযুক্ত ছিলে।

আর হ্যা রাতে ছাদে যাবেনা, একা একা।তোমাকে নিয়েতো আমার চিন্তার কোন শেষনেই।কি করবে তুমি? আমি চলে যাবার পরে তোমায় চোখে চোখে রাখবে কে? কে তোমাকে সন্ধ্যার পর জোর করে বাসায় ডেকে আনবে। তুমিতো আবার বেশি রাত না হলে বাসায় আসোনা।

আমি হেসেই উড়ে দিলাম ওর কথা।” ধুর পাগলি এখানে কান্নার কি হলো? তুমি কি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছো নাকি। আমাদের কি আর কখনো দেখা হবে না।দূর থেকেও তুমি আমার খেয়াল রাখতে পারবে।
ও এতদূরে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। আমার মনের সীমানার বাহিরে।আমার সবটুকু অবাধ্যতা নিয়ে চলে গেলো।তবেওর দেওয়া মাধুবীলতার গাছটা এখনো ঠিক বারান্দায় আছে।সারা বারান্দায় মাধুবীলতার ফুল ছড়িয়ে গেছে।আমি
ইচ্ছে করেই ডালপালা কাটি না। মাধুবীলতার মাঝে আমার মায়াবতীকে সবসময় খুজে
পাই।একদিন খুব সকালে আমার এক
জন্মদিনে মায়াবতী এই গাছটা আর আস্ত
একটা টব সহ হাজির।আমি অবাক হয়ে
গেলাম।
” তুমি সবসময় এমন করো কেন?কি
উল্টাপাল্টা গিফট আনছো।এসব গাছপালা
ফুল আমার পছন্দ না।কিছু ভালো মন্দ
খাওয়াবা,,, তা না গাছ নিয়ে হাজির।
তাও আবার মাধুবীলতা।নিজের যত্ন
নিতে পারি না।আবার গাছের”।
” শুন এটা আমার প্রিয় ফুল।তোমার যত্ন নিতে
হবেনা।আমি মাঝেমাঝে এসে যত্ন করে
যাবো।তুমি শুধু গাছ টা দেখে রাখরা।কেউ যেন
নষ্ট না করে।আর শুনো গাছটা যখন বড় হবে
দেখবা পাখিরা এসে কিচিরমিচির
করবে। তখন তোমার সকালের ঘুম ভাঙ্গবে।
ফুল ফুটলে ঘ্রাণ নিবে।রাতে এটা খুব
ভালো ঘ্রাণ দেয়”।
” এই শুনো তোমার এসব আজগবি কথা বাদ দাও,,,।
” রাগ করলে বুঝি”?
পুরনো দিনের সেইসব স্মৃতি এখন অর্থহীন।
আমি নিজে নিজে কিছুই করতে পারতাম
না।জীবনের ছোট বড় সবকিছু মায়াবতী মনে
করিয়ে দিত,,,,সেভ করার কথা,চুল কাটার
কথা,এমনকি ঠিক মত খেলাম
কিনা,ঘুমালাম কিনা তাও ।আজ আমি
একা একাই সব করি।সময় মত ঘুম থেকে
উঠি, নাস্তা করে অফিসে যাই।কখন কোন
মিটিং এ যাবো কেউ মনে করিয়ে
দেয়না ।ওর বিয়ের অনেক দিন হয়ে গেলো।
এই চার পাচ বছরের মধ্যে একবারও ওকে দেখিনি।
তবে এটা জানি ও খুব সুখে আছে ভালো
আছে।আমি কি খারাপ আছি?না,,,,আমিও
ভালো আছি। সবসময় ভালো থাকার
চেষ্টা করি।জীবন অনেক কিছু পরিবর্তন
করে দেয়।ওর ভালোবাসা যখন বুঝেছি খুব
দেরী হয়ে গেছে।তাই আমিও আমার
পরিবর্তন টা করে নিয়েছি।
বিশ্বাস কর তোমাকে সেদিন
মন থেকে ছাড়তে চাইনি,,,,
ছাড়তে হয়েছিল।
অতঃপর,,,,, আমি, মায়াবতী আর মাধুবীলতা
অজানা এক গল্পকথা।