“শেখ হাসিনাই আমাগো মা। মা’র কাম হইলো সস্তানদের মুহে খাওন তুইলা দেওয়া। মা মায়ের কামই করছেন। মা য্যান ভালো থাহে, সুস্থ থাহে—আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি।” উদ্বেলিত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন চা বিক্রেতা মিজান শেখ। এই হতদরিদ্র মানুষটির বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়নের গহওরডাঙ্গা গ্রামে। তাঁদের জন্য খাদ্যসামগ্রীর উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। এই সহায়তা পেয়ে মিজানের মতো অনেক দুস্থ ও গরিব মানুষ আনন্দে আত্মহারা। তাদের মুখে ফুটেছে সুখের হাসি। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় হতদরিদ্র ছয় হাজার ২০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

এ দুই উপজেলার পৌরসভা থেকে শুরু করে প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এই খাদ্য সহায়তা। গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই কর্মসূচি শেষ হবে আজ শুক্রবার। উপহারের প্রতিটি প্যাকেটে রয়েছে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি করে আলু, ডাল, এক লিটার তেল, আধা কেজি লবণ ও এক কেজি চিনি। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও শেখ কামালের ছবিসংবলিত পোস্টার। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বোনের নিজস্ব তহবিল থেকে পাঠানো অর্থ দিয়ে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

কোটালীপাড়া উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার জন্য চার হাজার প্যাকেট খাদ্য কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জন্য দুই হাজার ২০০ প্যাকেট খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। পাটগাতি ও টুঙ্গিপাড়া পৌর এলাকার ত্রাণ টুঙ্গিপাড়ার পৌর বাসস্ট্যান্ডে বসে বিতরণ করা হয়েছে গত মঙ্গলবার দুপুরে। এ সময় গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. বদরুল আলম বদর, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. দেদারুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফোরকান বিশ্বাস, উপজেলা

আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, পৌর কাউন্সিলর নাসির শেখসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সহায়তা পেয়ে খুশি শ্রীরামকান্দি গ্রামের বিধবা আমেনা বেগম (৬০)। খাদ্যের ব্যাগ হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের অনেক ভালোবাসেন। ভালো না বাসলে কেউ কি কাউকে কিছু দেয়। তাঁর মা ও ভাইয়ের জন্মদিনে আমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন। কোনো এমপি এ রকম করেন না। আমাদের শেখ হাসিনা প্রায়ই আমাদের জন্য সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে থাকেন।

আমরা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে মোনাজাত করি, উনাকে যেন আল্লাহ ভালো রাখেন। নেক হায়াত দান করেন।’ গহওরডাঙ্গা গ্রামের ভ্যানচালক হাবিবুল খান বলেন, ‘করোনার সময় ঠিকমতো ভ্যান চালাতে পারিনি। মাঝেমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের খাদ্য চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নেতারা আমারে দিছে। তাই খেয়েই ছেলে-মেয়ে নিয়ে চলেছে।’ কোটালীপাড়ার আয়োজন : কোটালীপাড়ায় এ সহায়তা পাচ্ছে চার হাজার পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার কুশলা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর এই উপহারসামগ্রী বিতরণের কাজ। এরই অংশ হিসেবে গতকাল উপজেলার তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের ৪০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

আজ হিরণ ইউনিয়নে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শেষ হবে। দরিদ্র পরিবারে এ সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘করোনাকালে এক বছর ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী এলাকার অসহায় ও দুস্থদের বিপুল খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আবার খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন। এই খাদ্যসামগ্রীকে ত্রাণ মনে করি না। এটি তাঁর ভোটারদের জন্য উপহার। তিনি এই মহামারির সময়ে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছেন।’ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে আমাদের এই এলাকা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন।

কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুতের বাতি জ্বলছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট হয়েছে। স্কুল-কলেজ হয়েছে। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ জনপদে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। তাদের বঙ্গবন্ধুকন্যা এই করোনাকালে বিপুল খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।’ কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যেসব সাহায্য-সহযোগিতা পাঠিয়ে থাকেন, তা সমবণ্টন করা হয়। এবার পাঠানো চার হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী ১১টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম ছাড়াও পৌরসভায়ও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উজেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমে ছাত্রদের জন্য কিছু খাদ্য দেওয়া হয়েছে।’

কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব আন্দোলন-সংগ্রামে নেপথ্যে থেকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। এই মহীয়সী নারীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন, এ জন্য তাঁকে অভিবাদন জানাই। তিনিই আমাদের একমাত্র আশা ও ভরসারস্থল। তাঁর সদিচ্ছায়ই কোটালীপাড়াবাসী ভালো আছে।’ সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হরগোবিন্দ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম হুমায়ুন কবির, সাবেক পৌর মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া দাড়িয়া, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা, আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুজ্জামান খান বাদল, মিজানুর রহমান বুলবুল, সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈ মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো খাদ্যসামগ্রী পেয়ে গতকাল খুশিতে কেঁদে ফেললেন স্বামী-সন্তানহারা সত্তরোর্ধ্ব প্রফুল্লা ওঝা। তিনি সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের কোনেরভিটা গ্রামের মৃত ক্ষিরোদ ওঝার স্ত্রী। স্বাধীনতাসংগ্রামের পরে বসন্ত রোগে প্রফুল্লা ওঝার স্বামী ক্ষিরোদ ওঝা মারা যান। স্বামী হারানোর পর আর বিয়ে করেননি প্রফুল্লা ওঝা। নেই ছেলে-মেয়ে। প্রায় ৫০ বছর স্বামীর ভিটা আঁকড়ে বেঁচে আছেন। খেয়েপরে বাঁচার জন্য একমাত্র সম্বল একটি বয়স্ক ভাতা। এই ভাতার টাকা এবং চেয়েচিন্তে যা পান তা দিয়ে চলে তাঁর জীবন। প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো খাদ্যসামগ্রী পেয়ে তিনি আনন্দে আপ্লুত। বলেন, ‘ভগবান য্যান আমাগো হাসিনাকে ভালো রাখে।

সে ভাতা দিছে, চাইল-ডাইল দিছে, আমরা খাইয়া-দাইয়া ভালো আছি।’ এভাবেই খাদ্যসামগ্রী পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। কোটালীপাড়ার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের হাজরাবাড়ি গ্রামের লতিকা বাইন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাগো প্রায়ই চাল, ডাল, আটা, তেল, নুন দেয়। আবার সাপানও দেয়। করোনার মধ্যি আয়-রোজগার নাই। শেখ হাসিনার ত্রাণ খাইয়া বাঁচইগা আছি।’

একই ইউনিয়নের হরষিত বিশ্বাস (৫৫) বলেন, ‘কাজকাম নাই, শেখ হাসিনার ত্রাণ না পাইলে ছোয়াল-মাইয়া নিয়া না খাইয়া থাকতে হইতো। আমরা উনার জন্যি প্রার্থনা করি। উনি য্যান ভালা থায়ে আর সুস্থ থায়ে।’ বহরাবাড়ী গ্রামের বৃদ্ধা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছোয়ালডা ভ্যানগাড়ি চালগাইয়া অল্পস্বল্প আয়-রোজগার করে। যা পায় তা দিয়া চাইল-ডাইলও হয় না। তেল-নুন তো দূরে থাক। করোনার মধ্যি যদি প্রধানমন্ত্রী আমাগো খাবার না দেতো, তাইলে না খাইয়া মোরগা যাইতাম।’