তৈয়বুর রহমান কিশোর, বোয়ালমারী(ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রায় অর্ধশত বাড়িঘরসহ স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামের চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে নতুন করে হামলার আশঙ্কায় এলাকার মানুষ বাড়িঘরের মালামাল নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে ওসি মো. আবু তাহের জানিয়েছেন।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিজয়ী চেয়ারম্যান এসএম মিজানুর রহমান ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খালিদ মোশাররফ রঞ্জু সমর্থকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম মিজানুর রহমানের সমর্থক ইউপি সদস্য আজগার আলীর লোকজনের সাথে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খালিদ মোশাররফ রঞ্জুর সমর্থক কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার লোকজনের মধ্যে সম্প্রতি কয়েক দফা ছোট-বড় সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জেরে গতকাল শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ইউপি সদস্য আজগার আলীর লোকজন প্রতিপক্ষ কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুইপক্ষের শতাধিক লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় পক্ষের কমবেশি বাড়িঘর ভাংচুর হয়েছে। এসময় নারী-পুরুষ দৌঁড়ে পালিয়ে রক্ষা পেলেও তাদের বাড়িঘরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
রবিবার বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গ্রামজুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন। ঘরের টিনেরচালা, বেড়া, কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জানালা-দরজা। বসতঘর, দোকান, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, কোনো কিছুই বাদ যায়নি নারকীয় হামলা থেকে। অক্ষত নেই ঘরের কোনো জিনিসপত্র। এসব বাড়িঘর থেকে লুটে নেওয়া হয় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, গোয়ালের গরু, দোকানের মালামালসহ দামী জিনিসপত্র। এতে দুইপক্ষের প্রায় ৩০-৪০ বাড়িঘরে ভাংচুর-লুটপাটে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থদের দাবি।
এ ব্যাপারে পাচুড়িয়া সংশ্লিষ্ট ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজগার আলী প্রতিপক্ষদের বাড়ি-ঘরে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তার পক্ষের লোকজনের বাড়িতে প্রতিপক্ষ প্রথম হামলা করেছে। এর আগেও প্রতিপক্ষের লোকজন তার ভাইকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে।
এলাকা থেকে বসতঘরের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যাওয়া আজগর আলীর সমর্থক জূয়েল শেখের স্ত্রী জানান, বসত করার মত পরিবেশ না থাকায় আমরা বাড়ির মালামাল নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছি। গ্রাম শান্ত হলে আবার ফিরে আসবো।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মো. আবু তাহের রবিবার বিকেলে বলেন, স্থানীয় বিরোধের জেরে দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় দুইপক্ষেরই বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন লোকজনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।