রাব্বি আহমেদ, বরগুনা প্রতিনিধিঃ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই প্রতিপক্ষকে দমনের খেলা শুরু করে দিয়েছেন বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার। নির্বাচনে ভোট না দেয়ায় এক দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারসহ একাধিক পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি।
গ্রাম না ছাড়ায় পুলিশের উপস্থিতিতেই লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে নির্মম নির্যাতন করলেন তিনি। একই সময়ে ভুক্তভোগী পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস ছোট্ট চায়ের দোকানটিও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।
এমন অভিযোগে আজ সোমবার সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নির্যাতনের শিকার ওই যুবক অসীম চন্দ্র শীল। সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী অসীম চন্দ্র শীল জানান, বামনা উপজেলোর রামনা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। রাজধানী ঢাকার একটি সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন।
তার দরিদ্র পিতা শ্রী বিমল চন্দ্র শীল স্থানীয় বৈকালিন বাজারের একজন ক্ষুদ্র চায়ের দোকানী। করোনা মাহামারির কারনে বেশ কয়েক মাস ধরে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসেন অসীম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার ক্যাডার বাহিনী ভোট না দেয়ার অভিযোগ তুলে পরিবারসহ গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন। ভুক্তভোগী অসীম চন্দ্র শীল আরও জানান, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নেতা হওয়ায় এবং তার অসংখ্য ক্যাডার বাহিনী থাকায় ভীতবিহŸল হয়ে চলতি মাসের ১৭ জুলাই সন্ধ্যা সাতটার দিকে বৈকালিন বাজারে উপস্থিত হয়ে সকল ভুল ত্রæটির জন্যে ক্ষমা চাইতে মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের কাছে দেখা করতে যান অসীম চন্দ্র শীল।
এসময় চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ফরিদ (৩৫), বাপ্পি (৪০), ফোরকান (২৬), ইমরাণ (১৭) এবং রাজু জোমাদ্দারসহ (৪০) আরও অনেক লোকজন মিলে অসীমকে ক্রিকেটের শক্ত স্টাম্ব দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এসময় স্থানীয় প্রতিবেশী জহিরুল ইসলাম উজ্জল ও ফকরুল ইসলাম কমল তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরকেও বেদম মারধর করে হাত ভেঙে দেয় তারা। এ ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে বামনা থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বামনা থানার ওসি মো. বশিরুল আলম। পরে মাথায় রক্তাক্ত জখম নিয়ে অসীম চন্দ্র শীল পার্শ্ববর্তী আরএন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে গেলে সেখান থেকে তাকে ধরে এনে চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার নিজেই লোহার পাইপ দিয়ে পূণরায় নির্মম ও নৃশংসভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। এসময় এসআই সিদ্দিক ঘটনাস্থলে এবং ওসি বশিরুল আলম ঘটনাস্থল থেকে অল্প কিছু দূরে উপস্থিত ছিলেন। এসআই সিদ্দিকের সামনে নির্মম এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও অসীমকে রক্ষা করতে কোন উদ্যোগই নেননি তিনি।
একই সময়ে বৈকালিন বাজারে অসীম চন্দ্র শীলের দরিদ্র পিতার দৈনন্দিন উপর্জনের একমাত্র অবলম্বন চায়ের দোকানটিও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার পোষা ক্যাডার বাহিনী। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মালেক মেম্বার (৫০) নজরুল ইসলামকে থামাতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করেন বলে জানান ভুক্তভোগী অসীম চন্দ্র শীল। প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতা মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের ভয়ে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎিসা নিতে পারেননি অসীম। এখন পর্যন্ত থানায় মামলা করতেও সাহস করেননি তারা। প্রথমে মঠবাড়িয়া হাসপাতালে এবং পরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলেও জানান অসীম চন্দ্র শীল।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার আরেক ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জহিরুল ইসলাম উজ্জল বলেন, মারধরের সময় অসীমকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তাকেও পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনী। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে যারা নজরুল ইসলামকে সমর্থন দেয়নি তাদেরকে নির্বাচনের পরে খেলা দেখাবেন বলেও নির্বাচন চলা কালিন সময়ে হুমকি দেয় তার ক্যাডার বাহিনী। এ বিষয়ে রামনা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। বরং অসীম চন্দ্র শীল এবং তার সহযোগীরা তার লোকজনের উপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে গিয়ে দুএকজন সামান্য আহত হয়ে থাকতে পারে। এর বেশি কিছুই নয়। এ বিষয়ে জানতে বামনা থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বশিরুল আলম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছেন। তবে কেউই এখনও পর্যন্ত তার কাছে মামলা করতে আসেননি বলেও তিনি জানান।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।