তদন্ত সাপেক্ষে সত্য উদঘাটন পরকীয়ার জেরে মায়ের হাতে শিশু সন্তান হত্যা
গত ৩ জুন ২০২১ ইং ঠাকুরগাঁও সদর দেওগাঁও চেড়াডাঙ্গী গ্রামের খলিলুর রহমানের পুত্র শিশু আরাফ (০৬) দূর্ঘটনা বশত ফ্যানের সাথে গলায় গামছা পেঁচিয়া মৃত্যুবরণ করে। এমন খবর পাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানা হতে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করে। সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।
অতপর শিশু আরাফের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের প্রেক্ষিতে সুরতহাল প্রস্তুতকারী অফিসার এসআই (নিঃ) পিযুস চন্দ্র সরকার সহ একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তদন্ত টিম মৃত আমির হামজা আরাফ (০৬) এর পিতা খলিলুর রহমানকে তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে তার স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পরামর্শ প্রদান করে। পরামর্শ মোতাবেক খলিলুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ধারণা করেন যে, তার স্ত্রী তার শিশু সন্তান আমির হামজা আরাফ কে সুকৌশলে হত্যা করেছে। উক্ত হত্যাকান্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার স্ত্রী (জান্নাতা) বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন।
পরে অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদন্তটিম মৃতের মাতা জান্নাতা আক্তার কে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জান্নাতা (মৃতের মাতা) তার ছেলে শিশু আরাফের হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতা আরো জানান যে, তার স্বামী মোঃ খলিলুর রহমানের সাথে ঢাকা শহরে বসবাস করাকালীন একই ফ্লাটে বসবাসকারী জনৈক ইমরান নামক এক অবিবাহিত ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে উভয়ের মধ্যে গভীর প্রেম ভালবাসা এবং অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা নিয়মিত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করত এবং মাঝে মধ্যেই ইমরান মৃতের পিতার অবর্তমানে জান্নাতা আক্তার এর সাথে দেখা করার জন্য বাসায় আসত। ইতোমধ্যে ঘটনার আনুমানিক ০২ মাস পূর্বে লকডাউনের কারণে জুলফিকার তার স্ত্রী ও সন্তানদ্বয়কে ঠাকুরগাঁও দেওগাঁও চেড়াডাঙ্গী গ্রামের শশুর বাড়ীতে রেখে যায়।
ইমরান মৃতের মাতা জান্নাতা আক্তারকে বিবাহ করার জন্য মোবাইল ফোনে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। দুই সন্তান ও স্বামীকে ছেড়ে ইমরানকে বিয়ে করা নিয়ে জান্নাতা (মৃতের মাতা) মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিল।
গত ০৩ জুন ২১ইং সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আরাফ তার নানার ঘরে দুষ্টামি করছিল যা জান্নাতা আক্তার সহ্য করতে না পেরে তার ছেলে আমির হামজা আরাফ (০৬) কে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে পিছন দিক হতে তার মাথা চেপে ধরে এবং এক পর্যায়ে শিশু আরাফের গলার দুই পাশ থেকে গামছা পেঁচিয়ে সজোরে টান দিয়ে শিশু আমির হামজা আরাফ (০৬) এর মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
উল্লেখিত আসামী মোছাঃ জান্নাতা আক্তার (২৭) বিজ্ঞ আদালতে তার শিশু আরাফের হত্যা সংক্রান্তে ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সদর থানার একটি চৌকস টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার কারণে এমন একটি হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্যে উম্মোচন হল। আসামিকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এসব ঘটনা সামাজিক অব্যক্ষয় বলে মনে করেন পুলিশ সুপার।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।