জিল্লুর রহমান রাসেল, ফরিদপুরঃ-ফরিদপুরে একটি খাল পুনঃখনন কাজে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কয়েক যুবকের উপর হামলা করেছে সাব ঠিকাদার ও তার ছেলেসহ কয়েকজন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের পাল্টা আক্রমণে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন সাব ঠিকাদার পিতা-পুত্র। ঘটনাটি মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে ফরিদপুর সদরের কৈজুরী ইউনিয়নের তুলা গ্রামে ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, খালের মাটি গাড়ি প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার করে বিভিন্ন জায়গা বিক্রিও করছে সাব ঠিকাদাররা।
জানা যায়, জেলা সদরের কৈজুরী ইউনিয়নের তুলাগ্রাম ভাঙ্গার খালে ২ কিঃমিঃ পুনঃখনন কাজ চলছে। গত ৩ মার্চ ২০২২ইং কাজটি শুরু হয়। কাজটি নেন ফরিদপুরের সেকেন্দার এন্টারপ্রাইজ। যার স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার ইকবাল হোসেন। তার নিকট থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজটি নেন জামাল হোসেন ও লালমিয়া নামের দুজন সাব ঠিকাদার। কাজটি দেখাশুনাও করতেন সাব ঠিকাদার জামাল হোসেন ও তার ছেলে সৈকত হোসেন এবং লালমিয়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাপক অনিয়মের সাথে ভেকু বসিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে। কোথাও ৪ ফুট, কোথায় ২ ফুট খনন করা হয়েছে, আবার কোথাও এক ইঞ্চি পরিমাণও মাটি কাটা হয়নি। ট্রাকে ভরে এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা। অথচ কাজের সিডিউল অনুযায়ী ৪/৫ফিট করে গভীর করার কথা। এছাড়া দুই পাড়ের পাকা রাস্তা উপর রাখা হয়েছে মাটি। কোথাও রাস্তা ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে আবার এলাকার হোসেন আলীর নামের এক লোকের মেহুগুনি বাগানের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ১০/১২টি মেহেগনি গাছসহ ২টি খেজুর গাছ। তুলাগ্রাম ব্রীজের নিচে অনেক জায়গা জুড়ে ভেকুও বসানো হয়নি, তার কিছু দুরেও মাটি কাটা হয়নি।
এ সময় স্থানীয়রা জানায়, এই ঠিকাদাররা ও ভেকু চালকেরা গাড়ি প্রতি ৫০০ টাকা করে বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করছে। যেখান থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা যাচ্ছে সেখান থেকে ব্যাপক আকারে মাটি কাটা হচ্ছে আর যেখান থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা যাবে না সেখান থেকে কাটা হচ্ছে না। আমাদের পাশের জায়গা অথচ আমরা মাটি চাইলে টাকা দাবি করা হয়। এছাড়া আমরা মসজিদের জন্য মাটি চাইলে তারা টাকা দাবি করে। বলে যে, টাকা না দিলে মাটি দেয়া যাবে না। এরা প্রতিদিন ৪০/৫০ গাড়ি মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে।
তারা জানায়, মসজিদে মাটি না দেয়া, রাস্তায় মাটি ফেলে চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করা এবং ঠিকমতো গভীর না করার বিষয়ে আমাদের এলাকার ছেলে সজল, শান্ত অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় জামাল হোসেনের ছেলে সৈকত সজলকে কিলঘুষি মারতে থাকে এবং বলে আমরা শহরের ছেলে বদরপুর আমাদের বাড়ি, বেশি কথা বলবি না। এ সময় জামাল হোসেন সহ আরো কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে ওদের মারধোর করে। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন জানতে পারলে তারাও জামাল ও সৈকতসহ কয়েকজনকে পিটায়। তারা অনিয়ম করবে, যাচ্ছে তাই মতো কাজ করে যাবে, এলাকার ক্ষতি করবে। আবার আমাদের মারধর করেও যাবে, এটা কি মগের মু্লুক পায়ছে নাকি?
এ বিষয়ে সাব ঠিকাদার জামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এলাকার লোকজন অতর্কিতভাবে আমাদের উপরে হামলা চালিয়েছে। আমার ছেলেকে ও আমাকে মারধর করেছে। মাটি বিক্রির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, আমরা মাটি বিক্রি করছি না।
এ বিষয়ে মূল ঠিকাদার ইকবাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মাটি বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। এলাকার লোকজন এসে তাদের উপর হামলা চালায় এবং মারধর করে বলে শুনেছি। কিছু কিছু জায়গায় ভেকু বসাতে না পাড়ায় হয়তো মাটি কাটা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন ঢালী জানান, মারধরের বিষয়টি আমি শুনেছি। তারা মাটি বিক্রি করতে পারে না। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।