দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় আরিফুজ্জামান (৮) নামে এক শিশুকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করে তার বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী শরিফুল ইসলাম (২৪)। কিন্তু মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুটিকে হত্যা করে বাড়ির আঙ্গিনায় পুঁতে রেখেছে সে।

জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে নিজের সাইকেলে নিয়ে ঘুরি বেড়িয়েছেন শরিফুল ইসলাম(২৪)। সন্ধ্যায় ভাড়া বাসাতেও নিয়ে গেছেন। তারপর রাতে আরিফুজ্জামানের বাবাকে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছেন। মুক্তিপন না পেয়ে ওই রাতেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বস্তাবন্দী অবস্থায় বাড়ির আঙ্গিনায় পুঁতে রেখেছেন।

এ ঘটনা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের কায়েমপুর ডাক্তারপাড়া গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে নিঁখোজ ছিলেন আরিফুজ্জামান। আরিফুজ্জামান ডাক্তারপাড়া গ্রামের কৃষক আতিউর রহমানের ছেলে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেনীতে পড়তেন।

নিঁখোজের পর থেকে আরিফুজ্জামানকে উদ্ধারে কাজ করছিল পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। স্থানীয় সূত্রের ভিত্তিতে ঘটনার পরেরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শরিফুল ইসলাম(২৪) নামের এক যুবককে আটক করে খানসামা পুলিশ। রোববার রাত ৯টায় আরিফুজ্জামানকে অপহরণ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

শরীফুলের কথা অনুযায়ী রোববার রাত সাড়ে দশটায় উপজেলার পাকেরহাট বাবুপাড়া এলাকায় তাঁর ভাড়া বাসার আঙ্গিনা হতে শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) চিত্ত রঞ্জন রায়।

শরিফুল ইসলাম একই পাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে। খানসামা বিএম কলেজে কম্পিউটার ট্রেড নিয়ে পড়ছেন। পাকেরহাট এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। পড়াশুনার পাশাপাশি সেখানে কিছু ছাত্রকে কম্পিউটার প্রশিক্ষনও দেন তিনি।

নিহত শিশু আরিফুজ্জামানের বাবা আতিউর রহমান বলেন, শুক্রবার দুপুর পর‌্যন্ত আরিফুজ্জামান তাঁর সাথে ক্ষেতে রসুন লাগানোতে সহযোগিতা করেছেন। তারপর নদীতে গোসল করে নামাজে গেছেন। নামাজ থেকে ফিরে একসাথে দুপুরের খাবারও খেয়েছি। এরপর বিকেলে বাইরে খেলতে গেছে। সন্ধ্যার অনেক পরও যখন বাসায় ফিরছিল না তখন খোঁজাখুঁজি শুরু করি।

সন্ধ্যা ৭টায় ফোনে একজন বলে আপনার ছেলেকে কিডন্যাপ করেছি। ছেলেকে পেতে হলে এক লাখ টাকা নিয়ে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে আসেন। টাকা নিয়ে আসলেই আপনার ছেলেকে পেয়ে যাবেন। এরপরই ফোন নাম্বারটিসহ খানসামা থানায় যোগাযোগ করি এবং লিখিত অভিযোগ করি। রাত নয়টার সময় আবারও ওই নাম্বার থেকে ফোন আসে। কিন্তু কোন কথা না বলেই ফোন কেটে দেয়।

দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(বীরগঞ্জ সার্কেল) খোদাদাদ সুমন বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমের কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করে দেন। স্থানীয়দের কাছে আমরা জানতে পারি ঘটনার দিন বিকেল শরিফুলের সাইকেলের পেছনে বসে ঘুরতে দেখা গেছে শিশু আরিফুজ্জামানকে।

পরে স্থানীয় সূত্র ও মুক্তিপন চাওয়া ফোন কলের সূত্র ধরে ঘটনা প্রকৃত ঘটনা উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শরিফুল তাঁর অপরাধ স্বীকার করেছে। টাকার প্রয়োজন থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে শরিফুল। আজ(সোমবার) দুপুর ১টায় বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ কার‌্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।