জয়পুরহাটের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিওন পদে চাকরি দেওয়া নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মরজিনা বেগম (৪০) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। উপজেলার ৪ জনের কাছ থেকে ওই নারী প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এদিকে এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী ওই নারীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে- মরজিনা বেগম নিজেকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে আসছেন। তবে মরজিনা বেগম নামে কোনো কর্মচারী সদর হাসপাতালে নেই বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মরজিনা বেগম জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার শিশি গ্রামের মোতালেব হোসেনের স্ত্রী। একমাস আগে কালাই পৌরশহরে জুতা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পরিচয়ের একপর্যায়ে তার ছোট ভাইয়ের চাকরির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মরজিনা নিজেকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেন। আনোয়ারের ছোট ভাইকে সেখানে মাষ্টার রোলে পিওনের (ওয়ার্ড বয়) চাকরি দিবেন বলে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ৬৫ হাজার টাকা দেন আনোয়ার। বাকি টাকা যোগদানের পর দিবেন বলে জানান।
গত ১ ফেব্রুয়ারি তার ভাইয়ের যোগদান করার কথা ছিল। কিন্ত যোগদানের দিন থেকে মরজিনা পলাতক। পরে তার আর কোনো খোঁজ না পাওয়ায় অভিযোগ করেন থানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু জুতা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনই তার ফাঁদে পা দেননি। আরও অনেকেই তাকে চাকরি জন্য টাকা দিয়েছেন। একই তারিখে জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মাষ্টার রোলে চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল তাদেরও। সে অনুযায়ী মরজিনাকে কালাই পৌরশহরের কর্মকারপাড়ার মঞ্জুরানী ৭২ হাজার, কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে চাউল ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন সাড়ে ৩ লাখ এবং একই উপজেলার তালোড়া বাইগুনী গ্রামের বিনয় চন্দ্রও ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এছাড়া শিশি গ্রামের অনেকের কাছ থেকে মরজিনা চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছে। এভাবে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছে মরজিনা।
ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, মরজিনা আমার দোকানের কাস্টমার। সেই সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। ছোট ভাই বেকার তাই মাঝে-মধ্যে দোকানে বসতো। মরজিনা সদর হাসপাতালে চাকরি করেন বলে ছোট ভাইকেও সেখানে চাকরি পেয়ে দিবেন। সে অনুযায়ী মরজিনাকে ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছি বাকি টাকাও জমি বিক্রি করে রেখেছি। ১ ফেব্রুয়ারি ছোট ভাইয়ের যোগদানের কথা ছিল কিন্তু মরজিনার খোঁজ পাচ্ছি না। পরে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারের চাউল ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, মরজিনাকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। চুক্তি হয়েছিল সাড়ে ৫ লাখ টাকা। যোগদানের দিনে বাকি ২ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। এখন তাকে পাচ্ছি না।
কালাই কর্মকার পাড়ার মঞ্জুরানী বলেন, তাকে বিশ্বাস করে ৭২ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার ছেলেকে কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝাড়ুদারের চাকরি দেওয়ার কথা বলে। সেজন্য তাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। বাকি টাকাও একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যোগার করেছি। এখন মরজিনার খোঁজ খবর কিছুই পাচ্ছি না।
মরজিনা বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয় সত্য। তবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
কোন হাসপাতালে চাকরি করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি না, আমার পরিচিত অনেকেই জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন। তাদের হয়ে আমি কাজ করি।
তারা কে জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে পারবেন না বলে জানান।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, জেলা আধুনিক হাসপাতালে এই নামে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। চাকরি দেওয়ার নাম করে যদি কেউ টাকা নেন তা অবশ্যই প্রতারণা। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ওই কর্মকর্তা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।