করোনা মহামারীর দীর্ঘ ৫৪৩ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলেও বহুশিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে না। দেড় বছর শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ৬২ প্রতিষ্ঠানের ৭০১ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন।
এরমধ্যে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৫ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান খন্দকার। এ উপজেলায় বিভিন্ন সংগঠন বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করলেও কিছুতেই থেমে নেই বাল্যবিয়ে। বিশেষ করে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিল্ডিং বেটার ফর গার্লস প্রজেক্ট, আর, ডি, আর, এস বাংলাদেশ বাস্তবায়ন এবং সিডা ও প্লানইন্টারন্যাশনাল বাংলদেশের সহযোগিতায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করলেও বাস্তবে তার চিত্র উল্টো। এছাড়াও ৬২টি প্রতিষ্ঠান ৭০১ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুল হাই। এরফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে এবং শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। দরিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা সহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার বেড়েই চলেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। অপরদিকে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে কাজী, মুন্সি পুরোহিতকে দায়ী করেছেন সচেতন মহল।
উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মুহা. মতিউর রহমান খন্দকার জানান, তার বিদ্যালয়ের মোট ৩৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। তিনি আরও জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির ২, সপ্তম শ্রেণির ১১, অষ্টম শ্রেণির ১৭, নবম শ্রেণির ২৮, দশম শ্রেণির ১৪ ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৩ জন বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। ঐ প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুপুর, আশামনি, নাছিমা ও আতিকা খাতুনসহ অনেকেই জানান, তারা ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনে ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের মন খারাপ হয়ে যায়। অনেকদিন পর বিদ্যালয় খোলার আনন্দের চেয়ে মন খারপই ছিল। এখন তারাও খুব দুচিন্তায়।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খয়বর আলী জানান, করোনার কারণে আমার ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। আমরা এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রশাসনের সহযোগিতায় পাড়ায়-মহল্লায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মতবিনিময়সহ সচেতনমূলক প্রচার চালানো হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিবাহের তথ্যটি পেয়েছি। এ পর্যন্ত উপজেলার ৭০১ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের শিকার হওয়ার তথ্য পেয়েছি। তবে এ উপজেলায় ৬৮৪ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তাদের বিষয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, ‘বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহের বিষয়টি শুনেছি। বাল্যবিয়ে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাজ শুরু করেছি।’ প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিকে নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।