যশোরের মণিরামপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে হাসাডাঙ্গা বিলের খাল পুন:খননে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তড়িঘড়ি করে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ খাল পুন:খনন কাজ শেষ করা হয়েছে । নামকাওয়াস্তে পুন:খনন করায় ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। ফলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়নবোর্ড সূত্রে জানাযায়, মণিরামপুর  উপজেলার চালুয়াহাটি, শ্যামকুড় ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্রায় প্রতিবছর বন্যায় প্লাবিত হয়। ফলে এসব এলাকায় কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়না। শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙ্গা বিল থেকে হরিহরনদী পর্যন্ত এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে খাল পুন:খনন করে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে চলতি অর্থ বছরে সরকার ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ততাধীনে পিআইসির(প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মাধ্যমে খনন কাজ করা হয়। খালের উত্তরপাশে নাগোরঘোপ, পূর্বপাশে দূর্গাপুর, পশ্চিমপাশে হাসাডাঙ্গা, দক্ষিনপাশে কেশবপুরের মধ্যকুল গ্রাম অবস্থিত। খাল খননের দায়িত্ব পান পিইসির সভাপতি কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে হাসাডাঙ্গা বিলের মধ্যবর্তি স্থান থেকে খাল পুন:খননের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। খনন করা হয়েছে বিলের এক পাশ থেকে। তাছাড়াও যে পরিমান মাটি কেটে গভীর করার কথা রয়েছে তা না করে দুই পাড়ের যৎসামান্য মাটি কেটে পাড় বাঁধা হয়েছে। কোন স্থানে গভীর করা হয়েছে দুই ফুট আবারও কোন স্থানে গভীর করা হয়েছে এক ফুট। আবার কোন স্থানে মাটি না কেটে দু’পাড় ছেটে সমান করা হয়েছে। হাসাডাঙ্গা বিল থেকে খালের সংযোগ স্থল হরিহরনদীর মুখে খনন করা হয়েছে খুবই অল্প। ফলে বিল থেকে পানির প্রবাহ গিয়ে হরিহরনদীতে পড়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। যে কারনে পার্শ্ববর্তি কেশবপুরের মধ্যকুল,মণিরামপুরে চালুয়াহাটির রতনদীয়া, নেঙ্গুড়াহাট, শ্যামকুড়ের নাগোরঘোপ, হাসাডাঙ্গা, চিনাটোলা, বাঙ্গালীপুর, সৈয়দমাহমুদপুর, ফকিররাস্তা, দূর্গাপুরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। খালপাড়ের বাসিন্দা মধ্যকুলের গৃহবধু শ্যামলী বিশ্বাস, টুম্পা রায় জানান, খাল খননে গভীর করার পরিবর্তে শুধুমাত্র দুই পাড় বাঁধা হয়েছে।

নাগোরঘোপের রবিউল ইসলাম, জামাল হোসেন, খলিলুর রহমান, মুস্তাকিম হোসেন জানান, তড়িঘড়ি করে যৎসামান্য মাটি কেটে দায়সারাভাবে খনন করা হয়েছে। তাদের দাবি আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ হরিহরনদীতে যেতে বাঁধাগস্থ হয়ে আবারও আশপাশের গ্রামসমুহে জলাবদ্ধা দেখা দিবে। ফলে এলাকাবাসী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ২৭ মে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তবে পিইসির সভাপতি কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান,খাল খননে কোনপ্রকার অনিয়ম করা হয়নি। খননের পর মাত্র পাঁচ লাথ ৩৫ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

খননকাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারি প্রকৌশলী ফিরোজ হোসেনের দাবি,এক কিলোমিটার খনন করার কথা থাকলেও হাসাডাঙ্গা বিলের মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা থাকায় মাত্র ছয়’শ মিটার খনন করা হয়েছে।ফলে ছয়’শ মিটারের বিল প্রদান করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, খাল পুনঃখননে কোন অনিয়ম মেনে নেয়া হবেনা । সঠিক ভাবে কাজ বুঝে নেয়ার পরই চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হবে।