কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর গ্রামের এক বিদেশ ফেরত এর বসত বাড়ীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দূর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, শীর্ষ সন্ত্রাসী ১২ মামলার আসামি নজরুল ইসলাম (৩৬) ও তার সহযোগী আব্দুর রশিদ (২৬) কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। গত শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতে উপজেলার হাসানপুর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত নজরুল ইসলাম বাজিতপুর গ্রামের কাওছার আলী মোড়লের ছেলে এবং আব্দুর রশীদ কাকিলাখালী গ্রামের আবুল কাসেম এর ছেলে।
আরোও পড়ুনঃ
কুকুর হত্যার প্রতিবাদে যবিপ্রবিতে মানববন্ধন, বিচারের দাবিতে আলটিমেটাম ঘোষণা
রাবিতে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত
ইতিপূর্বে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় মাদক, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মারমারি সহ ১২টি মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসী বাহিনী ও দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজরা গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ খুশি প্রকাশ এবং স্বস্তি ফিরে পেয়েছে। তারই পাশাপাশি কেশবপুর থানা পুলিশকে সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাসানপুর গ্রামের মৃত আঃ ওহাব বিশ্বাস এর ছেলে আমজাদ হোসেন একজন সিমেন্ট, বালু ব্যবসায়ী। আমজেদ এর ছেলে রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন। তার ছেলে মালয়েশিয়া থেকে ছুটি নিয়ে চলতি বছরের গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাসানপুর গ্রামের বাড়িতে আসেন। দেশে আসার পর থেকেই নজরুল ইসলামের হুকুমে চাঁদাবাজরা আমজেদ নিকট বিভিন্ন সময়ে একাধিক মাধ্যমে ২’লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। আমজেদ ও তার ছেলে টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তারই জের ধরে গত ৮ই অক্টোবর রাতে অনুমান ১০:৩০ ঘটিকার সময় চাঁদাবাজরা আমজাদ এর বসত বাড়ীতে বে-আইনীভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে অনধিকার প্রবেশ করে আমজাদ ও তার ছেলেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ২’লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।
আমজেদ ঘর থেকে বের হয়ে তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে ওই সময় আসামীরা আমজেদকে এলোপাতাড়ীভাবে চড় থাপ্পড় ও কিল ঘুষি মারতে থাকে এবং জীবনে মেরে ফেলার হুমকি ধামকি প্রদান করেন। পরবর্তীতে মারপিটের শব্দ শুনে বিদেশ ফেরত ছেলে ঘর থেকে বাহিরে আসলে তাকেও এলোপাতাড়ী ভাবে চড় থাপ্পড় ও কিল ঘুষি মারে এবং গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। বাপ ও ছেলের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে বসত বাড়িতে প্রবেশ করলে আসামীরা পালানোর চেষ্টাকালে নজরুল ইসলামকে আটক করে রাখে।ওইসময় বাকি আসামীরা পরিবারের লোকজনকে প্রান নাশের হুমকী প্রদান করে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে আমজাদ হোসেন এর ছেলে জরুরী পুলিশিং সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে স্থানীয় কেশবপুর থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আশপাশের লোকজন ঘটনার বিষয় জেনেশুনে নজরুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
ঘটনা উল্লেখ আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে ১ নম্বর আসামি পৌরশহরের বাজিতপুর গ্রামের কওছার আলী মোড়লের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৬), আলতাপোল গ্রামের ইকরামুল (৩০), মধ্যকুল গ্রামের গনি শেখের ছেলে দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী জামাল বাহিনীর প্রধান জামাল শেখ (৩২), কাকিলাখালী গ্রামের আবুল কাসেম এর ছেলে আব্দুর রশিদ (৩৫), মধ্যকুল গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম এর ছেলে শামীম হোসেন (২৬), দেউলী গ্রামের আব্দুল হামিদ গাজীর ছেলে জিলকস হুসাইন রাজু (২৬), মধ্যকুল গ্রামের ইসলাম সরদারের ছেলে রিপন হোসেন (২৭), ভবানিপুর গ্রামের আব্দুল গফুর মোড়লের ছেলে সোহেল হোসেন (৩৩), ভোগতী নরেন্দ্রপুর গ্রামের আকবর আলী সরদার এর ছেলে মাহবুর রহমান (৩৮), বায়সা গ্রামের আবু সাঈদ এর ছেলে আবু তাহের (৩২), ব্রহ্মকাটি গ্রামের রনি (৩৮), বাউশলা গ্রামের কামরুজ্জামান এর ছেলে আবু তাসকিন ইবনে জামান মাহি (২৪), বায়সা গ্রামের মুকুল হোসেন এর ছেলে মাসুদ হোসেন (২৪), বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আমীর আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৩০), মধ্যকুল গ্রামের আবুল কাসেম বিশ্বাস এর ছেলে সম্রাট বিশ্বাস (২৮), একই শফি সরদারের ছেলে ফিরোজ সরদার (৩১), আলতাপোল গ্রামের রাজু (৩৫), সাবদিয়া গ্রামের আবু তালেব এর ছেলে মুন্না হোসেন (২৫) এর নাম উল্লেখ করা সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামি করে কেশবপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেন। থানার মামলা নম্বর-৭।
মামলা হওয়ার পর এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী জামাল বাহিনীর প্রধান জামাল ও সহযোগীরা তাৎক্ষণিকভাবে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়। তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে (৮ অক্টোবর) ওই রাতেই কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীনের নেতৃত্বে উপ-পুলিশ পরিদর্শক আবুল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাসানপুর এলাকায় পুনরায় অভিযান চালিয়ে সহযোগী আব্দুর রশীদকে গ্রেফতার করে।
চাঁদাবাজির বিষয়ে এলাকাবাসীর অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা বলেন, কেশবপুর উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের গনি শেখের ছেলে জামাল শেখের নেতৃত্ব নিজের নামেই একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। সন্ত্রাসী জামাল বাহিনী পৌরশহরের নতুন ভবন নির্মাণ, নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন, জমিজমা ক্রয়-বিক্রয়, অবৈধভাবে জমি-জায়গা দখল, মৎস্য ঘের দখল, কেউ বিদেশ থেকে ফিরে আসলে তার কাছে মোটা অংকের চাঁদার টাকা দাবি। বড় বড় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি। তাদের দাবি পূরণ না করায় জামালের নেতৃত্বে হামলা ও মারপিটের শিকার হয়ে অনেকেই গুরুত্বর আহত হয়েছেন। এমনকি অনেকেই অপহরণের শিকারও হয়েছেন। শুধু তাই নয়! নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে আহত করার ঘটনাও রয়েছে বেশ।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীন বলেন, চাঁদাবাজি মামলায় একাধিক মামলার আসামি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ নজরুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় মাদক, মারামারি, চাঁদাবাজি, অপহরণ মামলা সহ ১২টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার পলাতক আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী, এলাকার ত্রাস, চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।