ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সদ্য ভূমিষ্ঠ এক নবজাতককে গলা টিপে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
বুধবার (১৭ আগস্ট) ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই রিফাত হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হচ্ছে- নবজাতকের মা নুরুন্নাহার খাতুন, নানি কমলা খাতুন ও মায়ের কথিত প্রেমিক আলিফ আবেদীন গুঞ্জন।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি (অপারেশন) হরিদাশ রায় জানান, পিতৃত্ব নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে মা ও নানির যৌথ ষড়যন্ত্রে শিশুটিকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে।
তিনি বলেন, গত সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে যখন প্রসব বেদনা নিয়ে নুরুন্নাহার হাসপাতালে ভর্তি হয় তখন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে তারা। অভিভাবক হিসেবে মা বলে এক নাম মেয়ে বলে আরেক নাম। এতে হাসপাতালের নার্সদের সন্দেহ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিশুটি জন্ম নেয়ার পর মা নুরুন্নাহার ও নানি কমলা খাতুন নবজাতককে হাসপাতালের একটি গলির মধ্যে নিয়ে হত্যা করে। প্রথমে শিশুটির অন্ডকোষ টিপে ধরে গলায় গামছা জাতীয় কিছু পেচিয়ে হত্যা করে আবার হাসপাতাল বেডে নিয়ে যায়।
বেডে নেওয়ার পর দেখা যায় নবজাতকের সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ। পুরুষাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে। গলায় দাগ। খবরটি দ্রুত হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, নার্সদের কাছ থেকে এমন নির্মম খবরটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তারসহ ঘটনার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কারণ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়।
নবজাতকের মা নুরুন্নাহার জানান, সন্তান জন্মদানের ১৫ দিন আগে কালীগঞ্জের আড়পাড়ায় তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তিনি যে গর্ভবতী ছিলেন, তা গোপন রাখা হয়।
এর আগে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নে নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে ৩ বছর পর স্বামী তাকে তালাক দেয়। নুরুন্নাহার পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে স্বীকার করেন এই নবজাতকের পিতা ব্যাপারীপাড়ার তারেক আবদীনের ছেলে আলিফ আবেদীন গুঞ্জন। এক বছর ধরে গুঞ্জনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। গুঞ্জন সম্পর্কে তার চাচাতো ভগ্নিপতি বলে নুরুন্নাহার দাবি করেন।
নুরুন্নাহার আরো জানিয়েছেন, তার পিতা হরিণাকুন্ডু উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের আকতার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে তার মা কমলা খাতুনের সঙ্গে নানা বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামে চলে আসেন। কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়ায় নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে তারা শহরে নদীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে।
এদিকে মামলা রেকর্ড হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, নবজাতক হত্যার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামিরা সবাই কারাগারে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।