![মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩](https://dailykolomkotha.com/wp-content/uploads/2022/12/dkk11595.jpg)
মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩
মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩
দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক হত্যা মামলাসহ ১০ এর অধিক মামলার দীর্ঘদিনের পলাতক মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী @জালাল গাজী @দাঁত ভাঙ্গা পলাশ’কে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর শাহজাহানপুরে টিপু হত্যা,বহুল আলোচিত বিশ^জিৎ হত্যা, পলাতক মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত বাউল মডেল, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে গলা কেটে অটোরিকশা চালক হত্যা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘদিনের পলাতক আসামিদের প্রতিনিয়ত আইনের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের প্রশংসা ও আস্থা অর্জন করেছে।
২। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থানায় গভীর রাতে মুখোশ পরে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্তসহ একাধিক মামলায় যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত খুনী পলাশ গাজী @জালাল গাজী @দাঁত ভাঙ্গা পলাশ (৪১), পিতা-মোঃ চাঁন্দু গাজী, সাং-নেমদী, থানা-বাউফল, জেলা-পটুয়াখালীকে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৩। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী @দাঁত ভাঙ্গা পলাশ২০১০ সাল থেকে ডাকাতি, মাদক, চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে ভাড়াকৃত সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি এলাকায় মমতাজ উদ্দিন নামে একজন ব্যক্তির সাথে তার ছোটভাই সুলতান আহমেদকে খুন করার বিষয়ে তাদের চুক্তি হয়। ভিকটিম সুলতান ও বড়ভাই মমতাজের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে মমতাজ ছোটভাই সুলতানকে খুন করার জন্য পলাশ ও তার বাহিনীকে ৫ লক্ষ টাকা ও ভুরুঙ্গামারি থানায় ০১ বিঘা জমি লিখে দেয়ার বিনিময়ে চুক্তি করে। মমতাজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ধৃত আসামি পলাশের নেতৃত্বে ৬ জন (নজরুল @মনজু, আমির, জাকির, জালাল@পলাশ, হাসমত ও মমতাজ) মিলে ২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি গভীর রাতে ভুরুঙ্গামারি উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামে মমতাজের নিজ বাড়িতে বসে সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশের নেতৃত্বেঅন্যান্য সহযোগীরা মুখোশ পরে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিহত সুলতানের বাড়িতে দল বেঁধে হামলা চালায়। প্রথমে তারা সুলতানের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে তাকে মুখমন্ডলসহ সারাশরীরে এলোপাতাড়ী কোপাতে থাকে। এসময় তার স্ত্রী হাজেরা বেগম বাঁধা প্রদান করলে তাকেও পিঠে এবং পেটে ধারালো রামদা দ্বারা কোপানো হয়। এরপর সুলতানকে তারা আবারও এলোপাতাড়ী কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে দুই নাতনি রুমানা ও আনিকা ছুটে এসে বাঁধা দিলে তাদেরকেও তারা বুকে এবং পেটে-পিঠে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে হত্যা করে। এভাবেই তারা একই পরিবারের ০৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে।
৪। ঘটনার পরবর্তী দিন সকালে নিহত সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ভুরুঙ্গামারি থানায় কয়েকজন কে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার কিছুদিন পর ভুরুঙ্গামারি এলাকায় অন্য একটি হত্যা মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ০২ জনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা স্বপরিবারে সুলতান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং তাদের সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে যেখান থেকে গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী @দাঁত ভাঙ্গা পলাশের নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন, পলাশ গাজী@জালাল গাজীসহ ০৭ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ১৬ ফেব্রæয়ারি ২০২১ তারিখ অভিযুক্ত হত্যাকারী মমতাজ উদ্দিন, পলাতক পলাশ গাজী@জালাল গাজী@দাঁত ভাঙ্গা পলাশসহ ০৬ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর একজনকে খালাস প্রদান করেন। রায় শুনানির দিন মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ০৬ জন আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও পলাশ গাজী @জালাল গাজী ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল।
৫। এছাড়াও, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বগুড়া জেলার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় মাইক্রোবাস চুরির উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসের চালক নুরুল হককে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় একটি পুকুরে ফেলে রাখে পলাশ গাজী ও তার সহযোগীরা। উক্ত হত্যার ঘটনায় গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসেবিজ্ঞ আদালত গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী @জালাল গাজীসহ মোট ০৯ জন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। উক্ত ০৯ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পলাশ গাজী@জালাল গাজী, নজরুল ইসলাম মনজু এবং আমির হামজা ২০১৪ সালের কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি এলাকায় একই পরিবারের ৪ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডেরও আসামি ছিল।
৬। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী @জালাল গাজীর বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায় ২০১৫ সালে হত্যা চেষ্টা মামলা, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সড়কে ২০১৫ সালে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা, রাজধানীর মতিঝিল এলাকার সড়কে ২০১৬ সালের ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ০১টি ডাকাতি ও ০১টি অস্ত্র মামলা, ২০১৭ সালে চুরি ও ভাঙ্গচুরের ০২টি মামলা এবংরাজধানীর চকবাজার থানায় ২০১৯ সালে বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে একটি হত্যা মামলাসহ মোট ১১টি মামলা রয়েছে।
৭। গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী @জালাল গাজীর কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। সে ১৯৯০ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি গ্যারেজে কাজ করত। পরবর্তীতে সে ট্রাকের হেলপারির পাশাপাশি মাঝে মাঝে চালকের ভ‚মিকা পালন করত। ১৯৯৫ সাল থেকে লাইসেন্সবিহীনভাবে কাভার্ডভ্যান চালাত। পেশায় মূলত একজন ড্রাইভার হলেও ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রকার অপরাধ কার্যক্রমের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল। ২০০৯ সালে সে একটি পুরাতন মাইক্রোবাসক্রয় করে চালানো শুরু করে।মাইক্রোবাসটি ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় মাদকের চালান সরবরাহ করত। এছাড়াও ভ‚য়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ শুরু করে। এরপর ২০১০ সালে তার নেতৃত্বে কয়েকজন সহযোগীসহ সে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর একটি দল তৈরি করে। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলারমহাসড়কে ডাকাতি, খুন, মারামারিসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাত।
৮। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা এবং ওয়ারেন্ট থাকায় সে নারায়ণগঞ্জ, কাঁচপুর, উত্তরা ও শ্যামবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা বদল করে পলাতক জীবন যাপন করে। পলাতক থাকা অবস্থাতেও সে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে তার দলসহ বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম করত। মূলত রাতের বেলায় সিএনজি চুরি, ভ‚য়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি এবং ভাড়ায় খুন ও মারামারির মত অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাত। এছাড়াও এসকল মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছে।
৯। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।