চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ‘এমভি আল বাখেরা’ জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। ওই ঘটনায় আকাশ মন্ডল ইরফান নামে একজনকে গ্রেফতারের পর এ ব্যাপারে জানানো হয়। র‌্যাব বলছে, দীর্ঘ আট মাস ধরে বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে জাহাজেরই একজন ইরফান ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটান।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান কীভাবে কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তার আদ্যোপ্রান্ত জানিয়েছেন র‌্যাবের কাছে। 

শুধু তাই নয়, জাহাজের মাস্টার সব কর্মচারীর ওপর বিনাকারণে রাগারাগি করতেন এবং কারোর উপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এ ব্যাপারে আকাশ জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতেন না। মাস্টারের এহেন কার্যকলাপের দরুণ আকাশের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিতশিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর আকাশ তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন।

যেভাবে হত্যা মিশন সফল করেন ইরফানঃ
ইরফান গ্রেফতারের পর হত্যাকাণ্ড মিশন কীভাবে সফল করেছেন তা জানিয়েছেন র‌্যাবের কাছে। তার ভাষ্যমতে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। শুধুমাত্র সুকানি জুয়েল এবং আকাশ ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজস্ব কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে সাহারা বিকন এলাকায় আরও ৮-১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেফতারকৃত আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙর করেন। পরে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাড়ে তিনটায় প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর তিনি চিন্তা ভাবনা করেন যে, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। ফলে একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।

ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে তিনি নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর নামের এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়ে। পরে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পালিয়ে যান। শেষে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে বাগেরহাটে চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।