কথিত লটারির আয়োজকেরা এখন কারাগারে। প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে

ডিভি লটারির মতোই ‘ইউএসএ লটারি’ ফরম ছেড়েছিল ‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি আবেদনের জন্য ফি হিসেবে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা।

অনলাইনে প্রতিষ্ঠানের চালানো প্রচার অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিল লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ১০০ জনকে বেছে নেয়ার কথা। তাদের মধ্যে ১০ জন আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন। বাকি ৯০ জন বিজয়ীকে বিভিন্ন দেশে ঘুরিয়ে আনা হবে।

তবে আমেরিকায় বসবাসের স্বপ্ন পূরণের বাসনায় যারা এই ফরম এবং ফি জমা দিয়েছেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ। কথিত লটারির আয়োজকেরা এখন কারাগারে। প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনলাইনে চালানো প্রচারে দাবি করা হয়, আবেদনকারীদের মধ্যে বিজয়ীদের বেছে নিতে ৩০ এপ্রিল রাত ১০টায় ঢাকায় ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে লটারির ড্র। এরপর দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হবে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নির্বাচিতদের তালিকা।

তবে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’ নামে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অ্যাপ তৈরি করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল।

‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’-এর অ্যাপ ২ লাখের বেশি ডাউনলোড হয়েছে দূতাবাসের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের প্রধান জাহিদ হোসাইনসহ তিনজনকে বুধবার গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। বাকি দুজন হলেন সোলাইমান ও মুকুল।

‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’-এর প্রতারণা নিয়ে গত ২৩ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কথিত লটারির ঘোষণায় সাড়া দিয়ে হু হু করে জমা পড়েছে আবেদন। প্রতিটি আবেদনের জন্য ফি হিসেবে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। ‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মানুষ আবেদন করেছেন। এ তথ্য সঠিক হলে অন্তত ৪২ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন আবেদনকারীরা।

আরও পড়ুন: সাবধান, আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের লটারির নামে প্রতারণা

তবে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন, এ ধরনের কোনো প্রোগ্রাম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নেই। এভাবে আয়োজিত লটারি জিতে আমেরিকায় স্থায়ী আবাস গড়ারও কোনো সুযোগ নেই।

আর ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাদের হল বুকিং বাতিল করা হয়েছে। বুকিং বাতিল হওয়ার পর ‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’ তাদের ফেসবুক পেজে আগের ঘোষণায় পরিবর্তন এনে অনলাইনে লটারির ফল ঘোষণার কথা জানিয়েছে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ঢাকায় ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে সেটি ‘ট্রাস্ট ট্যুর ট্রাভেলস অ্যান্ড কনসালটেন্সি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। এলিফ্যান্ট রোডের কাঁটাবন মোড়ের কাছে খাইরুন নেসা ম্যানশনের তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে এর অবস্থান।

আমেরিকায় ভিসার লটারি ভুয়া, তিনজন কারাগারে
‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’-এর ওয়েবসাইটের ডোমেইন কেনা হয় গত জানুয়ারিতে
প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মিজানুর রহমান নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, লটারির বিষয়টি পুরোপুরি দেখভাল করছে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ‘ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার’। বাংলাদেশ থেকে আবেদনকারীদের সুবিধার্থে ট্রাস্ট ট্যুর ট্রাভেলস অ্যান্ড কনসালটেন্সির সঙ্গে ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের চুক্তি হয়েছে। ছয় মাস আগে এই চুক্তি হয়।

ট্রাস্ট ট্যুর ট্রাভেলস অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেডের ডিরেক্টর জাহিদ হোসাইন দাবি করেন, ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার সাত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তবে নিউজবাংলা যাচাই করে দেখেছে, ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের ওয়েবসাইটটি গত জানুয়ারিতে তৈরি। ওয়েবসাইটের ডোমেইন কেনা হয় ১৬ জানুয়ারিতে। আর যে ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে সেটি তৈরি হয়েছে ২২ জানুয়ারি। আবেদনের অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি।

আমেরিকা থেকে লটারির পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার দাবি করা হলেও ফেসবুক পেজে দেখা গেছে, যে চার ব্যক্তি পেজটি পরিচালনা করছেন তাদের অবস্থান বাংলাদেশে।

এই প্রতারণার খবর প্রকাশের পর ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা জাহিদ হোসাইনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের কাছে প্রতারণার কথা স্বীকার করেন জাহিদ।

এরপর দূতাবাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিশেল লি গত বুধবার গুলশান থানায় মামলা এবং জাহিদকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

জাহিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরে সোলাইমান ও মুকুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য ডিভি লটারির মতো ইউএসএ লটারির ঘোষণা দিয়েছিল প্রতারকরা। বিষয়টি আমেরিকান দূতাবাসের নজরে আসার পর তারা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মামুন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তিনজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তথ্যসূত্র: নিউজবাংলা