ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহারাজপুর সাব-জোনাল অফিসের আওতাধীন এক রাতে একাধিক বৈদ্যুতিক মিটার চুরির পর মুঠোফোন নম্বর রেখে তাতে টাকা পাঠাতে বলেছে সংঘবদ্ধ চোর চক্র।

 

গত ২৭ জানুয়ারী রাতে সদর উপজেলার রানিহাটী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের পৃথক কয়েকটি স্থানে এসব চুরির ঘটনা ঘটে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহারাজপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোঃ আমিনুর রশুল বলেন, ২৭ জানুয়ারী রাতে রানিহাটী ও মহারাজপুর ইউনিয়নে মিটার চুরির দুর্ধর্ষ ঘটনাটি ঘটে।
চুরিকৃত মিটারের ভুক্তভোগী গ্রাহকরা হলেন সদর উপজেলার রানিহাটী ইউনিয়নের ঝিল্লিপাড়া গ্রামের তহুরুল ইসলাম, একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম, চুনাখালী গ্রামের মনিরুল ইসলাম এবং একই ঘটনার শিকার হয়েছে সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মেলার মোড় পার্শ্ববর্তী ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’।

চোর চক্র বৈদ্যুতিক মিটারগুলো চুরির পর চিরকুটে সিরিয়াল দিয়ে একটি মোবাইল নম্বর রেখে যায়। মিটারের গ্রাহকেরা ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তাঁদের কাছে প্রতিটি মিটারের দাম ৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এ টাকা ওই নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠাতে বলা হয়। যদি টাকা না দিয়ে মিটার লাগায়, তাহলে আবার মিটার চুরি হবে—মুঠোফোনে এমন হুমকি দেন চোর চক্রের সদস্যরা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষ থেকে থানায় মিটার চুরির ঘটনার অভিযোগ করা হয়েছে।

গত ২৭ জানুয়ারী/২৪ রাত ১০টা থেকে ২৮ জানুয়ারী/২৪ রাত ৪টার মধ্যে কোন এক সময় ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ (কোল্ড স্টোর) এর মিটার পল্লী বিদ্যুৎ এর পোল থেকে চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। যার মিটার নম্বর-২২৪৪৭২২৭, চোরেরা মিটার চুরি করে চলে যাওয়ার সময় একটি চিরকুটে ০১৮২৯-৯৫৯৭৬৬ নম্বর লিখে রেখে যায় এবং উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য বলে যায়। পরবর্তীতে চোর চক্রের দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করেন ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ এর প্রতিনিধি ফ্যাক্টরি ইনচার্জ মোঃ তারেক।

মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে ওই নম্বরে (মোবাইল ব্যাংকিং নগদ) এ ৫ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য বলে চোর চক্রের হোতা। তবে নাম পরিচয় দিতে নারাজ ওই হোতা। চোর চক্রের ওই হোতার সাথে দেনদরবার করে ২ হাজার টাকা চুক্তি হয়। ওই নম্বরে (মোবাইল ব্যাংকিং নগদ) এ ২ হাজার টাকা পাঠালে মিটারটি ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ (কোল্ড স্টোর) এর পাশে একটি বালু ঢিবির ভেতর পুঁতে রাখা আছে বলে জানায় চোর।

সে মোতাবেক সেই বালু ঢিবির ভেতর থেকে ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ (কোল্ড স্টোর) এর মিটার
টি পাওয়া যায় এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে মিটার টি পুনরায় সংশ্লিষ্ট স্থানে লাগানো হয়।

এমতস্থায় বৈদ্যুতিক মিটার নিয়ে বিপাকে গ্রাহকরা। মিটার চুরির পর চিরকুটে লিখে রাখা মোবাইল নম্বর (মোবাইল ব্যাংকিং নগদ) দিয়ে টাকা হাতাচ্ছে চোর চক্র। চোর চক্রের নগদ এ টাকা পাঠালেই মিলছে মিটারের খোঁজ। কোন রকম দ্বিধা ছাড়ায় মিটার গ্রাহকের সাথে কথা বলে নগদ এর মাধ্যমে টাকা নিচ্ছেন মিটার চোর চক্র। এঘটনায় সদর মডেল থানায় একাধিক অভিযোগ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এঘটনার কোন সুরাহা হয়নি। ধরাও পড়েনি চোর চক্রের কোন সদস্য বা হোতা। এভাবে বৈদ্যুতিক মিটার হারিয়ে যাওয়ায় এবং টাকা দিয়ে মিটার নেয়া এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে খরচ দিয়ে মিটার লাগানোসহ বিভিন্ন হয়রানীতে ক্ষুদ্ধ ও হতাশাগ্রস্থ ভূক্তভোগীরা। জেলায় বৈদ্যুতিক মিটার চোর চক্রের হোতাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে জরুরীভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকদের।

জানা গেছে, এঘটনায় গত ২৮ জানুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ (কোল্ড স্টোর) কর্তৃপক্ষ। এর আগেও ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ (কোল্ড স্টোর) এর একটি ট্র্যান্সফরমার চুরি করে নিয়ে চোর চক্র। এঘটনায় ও ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ কে মোটা অংকের অর্থ খরচ করে পুনরায় ট্র্যান্সফরমারটি লাগাতে হয়েছে। ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ এর প্রতিনিধি ফ্যাক্টরি ইনচার্জ মোঃ তারেক জানান, ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ এর মিটার বিদ্যুৎ এর পোল থেকে চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। তিনি বলেন, যেখানে মিটারটি লাগানো আছে, সেখানে সাধারণ চোর উঠে মিটার খুলে নিয়ে যাওয়ার সাহস করবে না। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক মিটার খুলেছে। মিটার জায়গা থেকে ৩৩ হাজার ভোল্ট এর তারের দূরত্ব খুব বেশি নয়, যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও চোর চক্র মিটার চুরি করে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে এবং গ্রাহকদের হয়রানী করছে কিভাবে?

তিনি বলেন, গ্রাহকদের মিটার চুরি হচ্ছে, গ্রাহকরা আর্থিকভাবে ও মানষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের হয়রানী থেকে বাঁচাতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, মিটার চুরি হওয়ার পর প্রকাশ্যে এভাবে টাকা নিচ্ছে চোর চক্র। সদর মডেল থানায় অভিযোগ দেয়াও কয়েকদিন হয়ে যাচ্ছে, তারপরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ প্রশাসন। বিষয়টি কেমন রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

এব্যাপারে ‘চাঁপাই এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা ব্যবসায়ীরা একটু নিশ্চিন্তে প্রতিষ্ঠান চালাতে চাই। এভাবে মিটার বা ট্র্যান্সফরমার চুরি করে যদি অত্যাচার চালানো হয়, তাহলে তো আমাদের ব্যবসা নিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়ছি। এসব চোররা আবার মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা নিচ্ছে বাধ্য করছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী ছাড়াও অন্যান্য গ্রাহকদের মিটারও যেন চুরি না হয়, সেটারও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই এই চোর চক্রকে খুজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মিন্টু রহমান বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে। চুরি রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঘটনার সুত্র ধরে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এজিএম আমিনুর রশুল আরও বলেন চেষ্টা করলে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে চোর চক্রকে শনাক্ত করে আটক করতে পারবে। কারন চিরকুটের নম্বর চালু আছে এবং সেই নম্বর থেকে টাকা দাবী করছে। সদর মডেল থানার ওসি দায়িত্বহীনতার কারনে পুলিশ জোরালো ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন তিনি।