রাকিবুল হাসান আহাদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ গাজীপুরে জমি প্রতারণামূলক মামলায় গ্রেফতার হয়েছে লক্ষীপুরার আলোচিত ভূমিখেকো ও মাদক সম্রাট সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনার। জমি প্রতারণামূলক মামলায় গত শুক্রবার তাকে গ্রেফতার করে গাজীপুর সদর থানা পুলিশ। মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, গাজীপুরের পুবাইলের মোয়াজ্জেম হোসেন রনির মাতার কাছে থেকে ২০১২ সালে আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের লক্ষ্মীপুরার চান্দনা মৌজায় ৮.৭৫ শতাংশ জমি ৭৮ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করে।
দীর্ঘ প্রায় দশ বছর অতিবাহিত করলেও জমির দখল বুঝে না দিয়ে, উল্টো ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন ভূমিখেকো মতি কমিশনার। এবিষয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, আদালতের মাধ্যমে জেলে প্রেরণ করা হয়। এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরার চান্দনা মৌজায় মৃত ছিদ্দিকুর রহমান এর ১৭.৫০ শতাংশ জমির ৮.৭৫ শতাংশ জমি মৃতের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর (মৃত) সন্তানদের কাছ থেকে অল্প মূল্য দিয়ে ভুয়া কাগজ বানিয়ে এই জমি ভোগ দখলে নেন মতি কমিশনার। সেই ভুয়া কাগজ দিয়েই নুরজাহান বেগমের কাছে সাফ-কাবলা দলীলে ৭৮ লাখ টাকায় ২০১২ সালে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করে মতি কমিশনার। ভুয়া কাগজে জমি বিক্রি করে পুনরায় তা দখলে রেখে নুরজাহান বেগম মারা যাওয়ায়, তাঁর ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন রনিকে ভয়ভীতি দেখায়, জমি দখল নিতে না আসে। এমনাবস্থায় কোন উপায় না পেয়ে মামলা করেন মোয়াজ্জেম হোসেন রনি।
সেই মামলায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেন। এই দিকে ১৭.৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ছিদ্দিকুর রহমানের ২য় স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে ১০ শতাংশ জমি জীবদ্দশায় লিখে দিয়ে গেলেও সেই জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে মতি কমিশনার। সর্বশেষ গত মাসের ২৮ তারিখ রাত ১২ টায় নিহতের প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের এই জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দখলের চেষ্টা করে মতি কমিশনার। রাতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে দোকান ও ঘর ভাংচুর করে। বসত ঘরের এক রুম দখলে নিয়ে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ছেলেকে বের করে দেয়।
পরবর্তীতে ফাতেমা বেগম গাজীপুর সদর থানার ওসিকে এবিষয়ে জানালে ওসি নিজে এসে লক্ষ্মীপুরার কাউন্সিলর জবে কমিশনারকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। এবিষয়ে আরও জানাযায়, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল জমিসহ বসতভিটা জবর দখল করার উদ্দেশে ইসমিতা জাহান পপি এবং তার স্বামী সাবেক কমিশনার আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে গাজীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তোভুগী ফাতেমা বেগম। পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। ফাতেমা বেগম নামের ঐ বিধবাঁ নারী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি একজন বিধবা অসহায় নারী।
গাজীপুর সিটির লক্ষীপুরা এলাকায় সারে দশ শতাংশ জমির উপর বাড়ি নির্মাণ করে সিটি কর্পোরেশনের যাবতীয় খাজনা খারিজ টেক্স পরিশোধ করে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছি। উক্ত জমিসহ বসতভিটা জবর দখল করার উদ্দেশে স্থানীয় প্রভাবশালী ইসমিতা জাহান পপি ও তার স্বামী সাবেক কমিশনার আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছে। তারা বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে ঝগড়া বিবাদ এবং আমার জায়গাসহ বাড়িটি অন্যায় ভাবে দখলের পায়তারা করছে। এছাড়া আমার একমাত্র পুত্র সন্তান মোঃ সিফাত আহমেদ (১৭)কে হত্যাকরে লাশ গুম করার হুমকি প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে আমি আদালত, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে বিবেকবানদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি। জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আমার নামে নানা মিথ্যাচার রটানো হচ্ছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মোবাইল ফোনে আমাকে ও আমার সন্তানকে খুন, গুম করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মতি কমিশনার।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নিকট গত ২১ এপ্রিল একটি অভিযোগ দায়ের করি। তিনি আরও বলেন, মতি-পপি দম্পতির অত্যাচার নির্যাতনের ভয়ে স্থানীয়রা কোন প্রতিবাদ করেন না। প্রশাসনের কাছে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। এছাড়া মতি কমিশনারের বড় ভাই ইমাম উদ্দিন ও ডাঃ সিরাজসহ এলাকাবাসী মতি-পপি দম্পতির প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি তারা ভুয়া দলীল করে নিজেদের দাবি করে আমাকে প্রায়শই উচ্ছেদের চেষ্টা করে। কখনও পুলিশকে ফোন করে কখনও জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ এ ফোন করে প্রশাসনের সহযোগিতায় এখানে টিকে আছি। আদালতে এবিষয়ে মামলা চলমান থাকলেও পপি আমাকে প্রতিমুহুর্তে জমি দখলের হুমকি দিয়ে আসছে। ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার দশ শতাংশ জমি বিক্রির করে এখান থেকে চলে যাবার হুমকি দিয়ে আসছে। এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (২৭ নং ওয়ার্ড), সদর উপজেলার চান্দনা মৌজায় ১০ শতাংশ সরকারি খাস জমি দখল করে পপি সুপার মার্কেট নির্মান ও সুপার মার্কেট সংলগ্ন রিক্সা গ্যারেজ নির্মান করে, গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে ভোগ দখলের অভিযোগ উঠেছে ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনারের স্ত্রী ইসমিতা জাহান পপির বিরুদ্ধে।
দখলকৃত জমিতে রিক্সা গ্যারেজ ও সুপার মার্কেট থেকে মাসিক মোটা অংকের টাকাও ভাড়া আদায় করছেন দম্পতি। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চান্দনা মৌজার (১ নং খতিয়ানভুক্ত দাগ নং এস,এ ১৯৫৬, আরএস ৪১২৭/৪১৯১) আরএস নং দাগে মোট ১০ শতাংশ সরকারি খাস জমি রয়েছে। যার সামান্য অংশ সরকারি রাস্তা প্রশস্ত করার সময় ব্যবহৃত হয়েছে এবং বাকি অধিকাংশ খাস জমি অবৈধভাবে বেদখলে রয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর সদর থানার সহকারী কমিশনার তানিয়া জান্নাত এই জমি উদ্ধারের ক্যাস ফাইল করেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন। মতি কমিশনার আপন খালাতো ভাই গাজীপুরের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ সিরাজের জমি ভোগদখল করার অভিযোগ রয়েছে মতি কমিশনারের বিরুদ্ধে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।