ফাইজুল ইসলাম ,বরিশাল সদর প্রতিনিধি: ব্যানার সরানোকে কেন্দ্র করে আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে ৮ জন গুলিবিদ্ধ হন। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে পরবর্তীতে পুলিশের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে দুই পুলিশ এবং আনসার সদস্যসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সিএন্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদের সামনে এই দফায় দফায় এই সংঘর্ষ হয়। তাছাড়া ঘটনার পর পরই উপজেলা পরিষদের সামনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে ময়লা আবর্জনার স্তুপ এবং ডাম্পিং ট্রাক রেখে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলবার রাতে নগরীতে অতিরিক্ত ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ অভিযানে নামে সিটি কর্পোরেশন। এতে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের একটি অংশ। তারা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অপসারণ অভিযান পরিচালনাকালে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন এলাকায় প্রবেশ করেন। তারা নির্দেশ উপেক্ষা করে ব্যানার ফেস্টুন খুলে ফেলার চেষ্টা করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিরাপত্তায় নিয়জিত আনসার সদস্যদের সাথে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যাওয়া লোকেদের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায় আনসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের ওপর হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এসময় আনসার সদস্যরা তার ওপরেও গুলি ছোড়ে বলে নিশ্চিত করেছেন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। এসম একাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। অপরদিকে, মেয়রের ওপর হামলার খবর পেয়ে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে জরো হতে শুরু করে। এক পর্যায় তারা উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ এবং গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায় নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে সেখানে কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ এবং লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হয়। এর পর পরই সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকটি ডাম্পিং ট্রাক সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ওপর আড়াআড়ি করে রেখে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।
পাশাপাশি রাস্তার ওপর ময়লা আবর্জনার স্তুপ করে রাখে। এদিকে, ‘প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পরে পুলিশ পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পাশাপাশি রাস্তার ওপর থেকে ডাম্পিং ট্রাক এবং ময়লা আবর্জনা অপসারনের উদ্যোগ নেয়। পরে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক, বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাদের উপস্থিতিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে রাতের আঁধারে কয়েকজন লোক ব্যানার ফেস্টুন খুলতে আসে। তারা অনুমতি না নিয়েই উপজেলা পরিষদ চত্বরে আমার বাসভবনের মধ্যে ঢুকে পরে। তারা ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ সরানোর কথা বলে। এটি সংরক্ষিত এলাকা বিধায় আমি তাদেরকে অপসারণ কাজ দিনে করার জন্য বলি। তিনি বলেন, ‘তখন লোকগুলো সেখান থেকে চলে গেলেও কিছুক্ষণ পরেই দুই-তিনশ লোক পুনরায় আমার বাসভবনে ভেতরে প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। আমি তাদের নাম জানতে চাইলে নেতৃত্বে থাকা একজন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খান, একজন সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত এবং অপরজন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু বলে পরিচয় দেয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসভবনের মধ্যে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে আনসার বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে ফোর্স করে। তখন পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে আনসার সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে গুলি করে। এর পর পরই শত শত লোক সদর উপজেলা পরিষদের সামনে এসে জড়ো হয়। পরিষদের গেট বন্ধ থাকায় সেটা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় ঘটনার পর পরই আমি বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরিশালের জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মহোদয়কে জানিয়েছি। পরে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক জানিয়েছেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান পুলিশকে অবহিত করেন যে তাঁর বাসভবন এলাকায় কিছু লোক ব্যানার খুলতে আসে। কিন্তু সংরক্ষিত এলাকায় হওয়ায় রাতের বেলায় এভাবে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন তিনি। সেসময় আগত লোকেরা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধ অমান্য করে বাসায় প্রবেশ করতে উদ্যত হলে নিরাপত্তার খাতিরে দায়িত্বরত আনসার বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছোড়ে। তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের দুই সদস্য এবং তিনজন আনসার সদস্য ও ব্যানার খুলতে আসা লোকেদের কয়েকজন আহতত হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্য আবুল কালাম ও শরীফুল ইসলামকে বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়াও আহমেদ শাহরিয়া বাবু নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে, রাত আড়াইটার পরে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ শুরু থেকে ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, ‘থানাকাউন্সিলের মধ্যে পুকুর রয়েছে। যেখানে মানুষ ওজু-গোসল করে। ওই পুকুরটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছিলো আমার কর্মীরা। কাজ শেষ করে ফিরবে সেই মুহুর্তে ইউএনও বের হয়ে আমার কর্মীদের জিজ্ঞাসা করে কার অনুমতি নিয়ে তারা এখানে প্রবেশ করে। এমনকি তিনি কর্মীদের কালাগাল দিয়েছে বলেও শ্রমিকরা আমাকে জানিয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।