সম্প্রতি রাজশাহীতে বাল্যবিবাহ পড়াতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে ধাওয়া খেয়ে বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন লিটন নামের এক ভুয়া কাজী। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুর ৩টায় নগরীর হাদির মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়,গত ১৯ (জুলায়) শুক্রবারে রাজশাহী নগরীর হাদির মোড়ে সিমু নামের ১৪ বছরের এক কিশোরীর বাল্যবিবাহ পড়াতে যান লিটন নামের এক ভুয়া কাজী। এলাকাবাসী বাল্যবিবাহ বিষয়টি জানতে পেলে বিয়ের বাড়িতে কাজী আসার অপেক্ষা করেন। একসময় কাজী বিয়ে পড়াতে আসলে এলাকাবাসী তাকে আটক করেন। কাজীকে সন্দেহজনক হলে এলাকাবাসী থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে ক্ষুদ্ধ জনতা এবং পুলিশের হাত থেকে রেহায় পেতে দ্রুত বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান লিটন (কাজী)।

জানা যায়, এই লিটন (সহকারী কাজী) রাজশাহী জেলার মোহনপুরের মোকাদ্দিম হোসেন শাওন নামের এক কাজীর সহকারী। তিনি কাজীর সহকারী হয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজী পরিচয়ে বাল্যবিবাহ পড়িয়ে আসছিলেন।

আরোও জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বোয়ালিয়া মডেল থানায় বিস্ফোরক মামলায় রাজশাহী জেলা ডিবির হাতে আটক হন ভুয়া কাজী লিটন। শুধু তাই নই বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে মূল কাজী মোকাদ্দিম হোসেন শাওন এর বিরুদ্ধে।

গত ০১(মার্চ)২০২৪ তারিখে বরিশাল সদর (কোতয়ালী) থানায় জাল দলিল, ভয়ভীতি এবং প্রতারণার মামলা, যাহার নং ১৫৪ ধারায় ৪০৬/৪৬৭/৪৬৮/৪২০/৪৭১/১০৯/৫০৬/ পেনাল কোড অনুযায়ী মোসা: তাজকিয়া জাহান লিপি (২৫) সাং, লালমনিরহাট,সুজানগর,পাবনা বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এই মামলায় মোকাদ্দিম হোসেন শাওন (কাজী) ২নং আসামী এবং পলাতক রয়েছেন।

এর পরে গত ২৮ (মার্চ) ২০২৪ তারিখে মোকাদ্দিম হোসেন শাওন (কাজী) রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার এসআই পরিচয়ে প্রফেসর ইয়ামিন রেজা’কে জিম্মি করে নগদ ১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। পরে প্রফেসর ইয়ামিন রেজা বাদী হয়ে রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানায়,যাহার মামলা নং ৪৭ ধারায় ৩৪২/৩২৩/৩৮৪/৩৮৫/৩৮৬/৪৬৮/৫০৬ পেনাল কোড অনুযায়ী নারী দিয়ে ফাঁসানো এবং মুক্তিপন চাঁদাবাজি’র একটি মামলা রুজু হয়। মামলায় গ্রেফতার হয়ে ২নং আসামী মোকাদ্দিম হোসেন শাওন (কাজী) দুইমাস যাবত জেলেও খেটেছেন।

এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরেও থেমে নেই মোকাদ্দিম হোসেন শাওন কাজী’র প্রতারণা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোকাদ্দিম হোসেন শাওন (কাজী) জানান, লিটন নামে আমার সহকারী বিস্ফোরক মামলায় আটক হয়েছে। আমার নামে যত মামলা আছে সব মামলা নাম্বার দিয়ে নিউজ করেন আমিও দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের রাজশাহী ব্যুরো চিফ বলে ফোন কেটে দেন।

এবিষয়ে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের রাজশাহী ব্যুরো চিফ মোঃ আল-আমিন হোসেন বলেন,আমিও শুনেছি বিভিন্ন বিয়ে বাড়িতে বিয়ে পড়ানোর সময় দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের ভুয়া কার্ড গলায় ঝুলানো থাকছে। এরা কারা আমি বা আমার অফিসেও চেনে না। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার সাথে মোকাদ্দিম হোসেন শাওনের কোন সম্পর্ক নেই। তাকে গত ০৭জুলাই/২৪ইং তারিখে অব্যাহতি প্রদান করেছে কর্তৃপক্ষ।কেউ যদি দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার নাম ব্যবহার বা পরিচয় দিলে কোন রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে তার দায়ভার প্রতিষ্ঠান নেবে না । এবং কর্তৃপক্ষর সাথে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে ভুয়া কাজী লিটন হাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে আরএমপি’র মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম জানান, লিটন ওরফে ভুয়া কাজী তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা ছিলো তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কাজী সমিতির সাধারন সম্পাদক আকবর হোসেন জানান, নিজের জেলার বাইরে সহকারী রাখা এবং শাওন কাজীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ এসব বিষয়ে মোকাদ্দিম হোসেন শাওন কাজীকে একাধিকবার বলা হয়েছে সে কোন আইনকে তোয়াক্কা করেন না তার ইচ্ছা মত চলে। এসব বিষয়ে ডিসি স্যার কেউ জানানো হয়েছে।