আকাশ রহমান,স্টাফ রিপোর্টারঃ ঠাকুরগাঁওয়ে রুহিয়ায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে ঝাড় গাঁও গ্রামের মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী রানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভোক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ করে। রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, স্কুুলে যৌন হয়রানির ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জানা যায়, আখানগর ইউনিয়নের ঝাড়গাঁও গ্রামে মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪০ সালে, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করন হয়েছে ১৯৭৩ সালে।
২০১১ সালে বিদ্যালয়টিতে নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় ওই স্কুলের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসতেন নিয়োগ পাওয়া ও-ই নৈশ প্রহরী। অনেক কোমলমতি ছাত্রীরা ওই নৈশ প্রহরী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলেও লজ্জার ভয়ে মুখ খুলেননি কেউ। গত বৃহস্পতিবার চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে দোতলায় ডেকে নিয়ে আসে। এরপর তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। ছাত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে উপস্থিত হয়, সহপাঠী অনামিকা ও উম্মে। নৈশ প্রহরী যেসব কর্মকান্ড করেছে সব কিছু অনামিকা ও উম্মেকে খুলে বলে ওই ছাত্রী। তখন উম্মে সালমা ছাত্রীটিকে তার পিতা মাতার কাছে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় অভিযুক্ত নৈশ প্রহরীর বিচারের দাবিতে ছাত্রীর পিতা রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিত্র রঞ্জনের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করে। আজ সোমবার এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসী অভিযুক্ত নৈশ প্রহরী রানা চৌধুরীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। এদিকে এ ঘটনার পর সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। অভিভাবক আব্দুল মালেক বলেন, এটাই এই দাপ্তরিকের প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা রকম কথা শোনা গেছে। স্কুলের অফিস রুমে সে মাদক সেবন করে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে একাধিকবার। সেই সঙ্গে কোমলমতি শিশুদের ওপর কুনজর তো আছেই। তাই এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও তার বিচার চাই। আরেক অভিভাবক জাহানারা আক্তার বলেন, ঘটনাটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমার মেয়েও বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু এমন ঘটনার পর থেকে কিছুতেই আর মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে মন চায় না, ভয় লাগে। আমরা গরীব অসহায় মানুষ বাচ্চাদের ভালো কোন কিন্ডারগার্টেনে পড়ানো সম্ভব না। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী উম্মে সালমা জানান, আমি কয়েক দিন এরকম দেখেছি। এইসব বিষয়ে কাউকে কিছু বললে আমাকে মেরে ফেলে পুতে দেওয়ার ভয় দেখায়। অপর প্রত্যক্ষদর্শী অনামিকার দাদা মফিজ উদ্দিন বলেন, আমার নাতনী আমাকে সবকিছু খুলে বলেছে। সে ওই স্কুলে যেতে চাইতো না। আমরাও এখন অনামিকাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাবো।
উম্মে সালমার দাদী তাহমিনা বলেন, আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু আামাদেরও ইজ্জত আছে। এরকম ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে কিন্তু অপরাধী প্রভাবশালী হওয়াতে কোন বিচার হয়না। ওই স্কুলে আর আমাদের বাচ্চাকে যেতে দিবো না। অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী রানা চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, রাতে বিদ্যালয়ের অফিস রুমে ইয়াবা সেবন সহ নানান অপকর্মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। আমরা রানা চৌধুরীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, যেহেতু সে (রানা) সরকারি কর্মচারী না এবং চুক্তিভিত্তিক কাজ করে তাই তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাকে অপসারণ করেছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।