সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ২০১৫ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬টি। তবে ৩ বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাঘ রয়েছে ১১৪টি। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণে আবারও শুরু হচ্ছে বাঘ গণনা। এ অবস্থায় আজ (২৯ জুলাই) পালিত হবে বিশ্ব বাঘ দিবস।
‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’র আওতায় চলতি বছরের অক্টোবর থেকে গণনার কাজ করা হবে। এজন্য বনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের (ফাঁদ) কাজ শুরু করবে বন বিভাগ।
বন বিভাগের সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি, ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি ও এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০-৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। এরপর ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানানো হয়।
একইভাবে ২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি, ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।
অনুরূপভাবে ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। হঠাৎ করে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬তে নেমে এলে হৈচৈ পড়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপে ১০৬ থেকে বেড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে।
সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে মাত্র ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকি ২৫টি হত্যা করেছে চোরা শিকারিরা।
সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কালাবগী স্টেশন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সরকার বাঘের সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। যার সুফল দেখা যাচ্ছে। বিগত তিন বছরে অনেক বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।
সুন্দরবনের সহ ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম গাজী বলেন, লোকালয়ে আসা বাঘ নিরাপদে ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে এখন আর মানুষ বাঘ পিটিয়ে মারে না।
কয়রার সুন্দরবন মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম করিম বলেন, সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে এটা নিঃসন্দেহে খুশির বিষয়। বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনকে নিরাপদ করতে পারলে অবশ্যই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, চোরা শিকারিদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বাঘ। তারা বাঘ শিকার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। এই চক্র যাতে করে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না পারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারিসহ টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া বাঘ যাতে তার স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, নতুন প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট কলার স্থাপন ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং এর মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর আওতায় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে বাঘ গণনায়। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জন্য বনের বিভিন্ন এলাকায় ২০০টি বিশেষ ক্যাটাগরির ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য কম হওয়ায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ইতোমধ্যেই বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাঘের প্রজনন মৌসুম জুন থেকে আগস্ট সুন্দরবনের সকল পাশ-পারমিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচল করতে পারবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।