বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিৎস্কি বলেছেন, বাংলাদেশে তেল বিক্রির জন্য রাশিয়ার প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ অশোধিত এবং পরিশোধিত উভয় প্রকার তেল রাশিয়া থেকে কিনতে পারে। অশোধিত তেল কেনার ক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে নমুনা এনে পরীক্ষা করে দেখতে পারে বাংলাদেশের শোধনাগার তা পরিশোধন করতে পারে কি না। রাশিয়ার তরফে এমন প্রস্তাব আমরা বাংলাদেশকে দিয়ে রেখেছি।

তিনি বুধবার ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাসে এক গোলটেবিল আলোচনায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন। ইউক্রেনে রুশ অভিযানের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রুশ মিডিয়া স্পুটনিকের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক পরিচালক ভাসিলি পুশকভ অংশ নিয়ে বলেন, পশ্চিমা মিডিয়া ইউক্রেনে রুশ অভিযানের বিষয়ে একপেশে সংবাদ দিচ্ছে। এ ব্যাপারে স্পুটনিক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তুলছে। তিনি সংবাদে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন যে, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। অপরাপর দেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না। রাশিয়া থেকে অশোধিত ও পরিশোধিত তেল বাংলাদেশে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারিভাবে এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।

রাশিয়ার ডিজেল দূষিত বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিমের মতামত সম্পর্কে মন্তব্য চাইলে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, তামিমের মতামত তিনি এখনো দেখেননি। রুশ রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্যে রাশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বিশেষ করে সার, গম, খাদ্যশস্য বাংলাদেশ আমদানি করতে পারে। জিটুজি ভিত্তিতে সরাসরি বাংলাদেশে গমসহ খাদ্যশস্য বিক্রির আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

প্রাথমিকভাবে তিন থেকে চার লাখ টন খাদ্যশস্য বাংলাদেশে বিক্রি করা হবে। ডলারের সংকট থাকায় টাকা এবং রুশ মুদ্রা রুবল ব্যবহার করে বাণিজ্য পরিচালনা করা যায় কি না- সে বিষয়ে দুদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচনা করছে। তারা বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাংলাদেশের কাছে বাণিজ্য ক্ষেত্রে রাশিয়া কী কী প্রস্তাব দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব প্রস্তাবের গোপনীয়তা রক্ষা করা তার দায়িত্ব। এটা এখন প্রকাশ করার বিষয় নয়।

বাংলাদেশের সঙ্গে জ্বালানি খাতের সহযোগিতা সম্পর্কে আলেকজান্ডার মান্তিৎস্কি বলেন, বাংলাদেশে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা তার একটি উদাহরণ। রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রম ১৭টি কূপ খনন করেছে। চলতি বছর গ্যাজপ্রম আরও তিনটি গ্যাস কূপ থেকে খনন কাজ পরিচালনা করবে।

এ উদ্যোগ বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সুসংহত হবে। পটাশ সার বিক্রির প্রস্তাবও আলোচনা হচ্ছে। খাদ্য ও সার রপ্তানির ক্ষেত্রে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নয়। বাংলাদেশ থেকে ওষুধ ও কৃষিজাত পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী রাশিয়া। রাশিয়া ও বাংলাদেশ কোম্পানি স্যাটেলাইট নির্মাণে চুক্তি সই করেছে।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থির পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া দায়ী নয়। কোভিড মহামারির পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করেছে। রাশিয়া যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে দায়িত্বশীল। আক্রান্ত না হলে এ অস্ত্রের ব্যবহারের চিন্তা করা যায় না।

তিনি বলেন, পশ্চিমাদের কারণে ইউক্রেনে রুশ অভিযান অনিবার্য ছিল। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, এককেন্দ্রিক বিশ্বের দিন শেষ। অনেক দেশ রাশিয়াকে সমর্থন করে। বিশেষ করে ছোট দেশগুলো নিষেধাজ্ঞার ভয়ে সবকিছু বলতে পারছে না।