ডেস্কঃ

দেখবেন মাত্র ১৮ দিনে কিংবা ৩৬ দিনে দেশ পাল্টে গেছে।

জীবন থেকে নেয়া। সুইজারল্যান্ডের একটা ঘটনা বলছিঃ-

রাস্তার পাশে একটি বিড়ালকে পায়খানা করতে দেখে সেপথ দিয়ে যাওয়া সেখানকার এক মন্ত্রী তার গাড়ী থামালেন। বিড়ালটি মল ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর সেই মন্ত্রী গাড়ী থেকে নামলেন। পকেট থেকে টিস্যু বের করে সেই মলগুলোকে নিজ হাতে ডাস্টবিনে ফেলে এসেছেন.!! অতঃপর হাত ধুয়ে তিনি আবার তার যাত্রা শুরু করলেন।

জাপানের একটা ঘটনা বলছিঃ-

নয় বছরের এক বালক সুনামিতে তার মা-বাবা, ভাই পরিবার সবাইকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেখানে এক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেন। প্রচন্ড শীত আর ক্ষুধার যন্ত্রনায় ছেলেটি যেনো মারা যাবে অবস্থা। ভলান্টিয়াররা রুটি বিলি করছেন, ছেলেটিও লাইনে গিয়ে রুটির আশায় দাঁড়ালো। এক বিদেশী সাংবাদিক দেখলেন যে পরিমাণ রুটি মজুত আছে সেটা লাইনের সবাইকে পোষাবে না। ছেলেটি হয়ত রুটি পাবে না।সাংবাদিক সাহেব তার ভাগের রুটি দুটো ছেলেটিকে দিয়ে দিলেন। ছেলেটি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সহিত রুটি গ্রহণ করলো এবং যেখান থেকে রুটি ভাগ হচ্ছে সেখানে গিয়ে জমা দিয়ে আবার লাইনে দাঁড়ালো। দৃশ্যটি দেখে সাংবাদিক কৌতূহলের সহিত জিজ্ঞেস করলেন—এই কাজ কেনো করলে খোকা? খোকা উত্তর দিলো–বন্টন তো ওখান থেকেই হচ্ছে।উনাদের হাতে থাকলে সবাই সমান ভাগ পাবে।তাছাড়া লাইনে আমার চেয়ে আরো ক্ষুধার্ত লোক থাকতে পারে। “সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে বন্টনে অসমতা এনেছেন” এই লজ্জায় সাংবাদিক নিজে নিজে অপরাধবোধ করতে লাগলেন। নয় বছরের বাচ্চার কাছে কি বলে ক্ষমা চাইবেন তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।

কাম ট্যু দ্যা পয়েন্টঃ- দেশ জলাবদ্ধতায় ভরে গেছে। আপনি সরকারকে একটা গালি দিয়ে “উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ” এই বলে একটা উপহাসমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে দিলেন।ব্যস, এখন আপনার কাজ শেষ। একটু দাঁড়ান, হ্যাঁ আমি আপনাকে বলছি; “বাংলাদেশ” শব্দটা উচ্চারন করতে লজ্জা করেনি আপনার? আজকে কাঁচাবাজার করে পলিথিন গুলো কোথায় ফেলেছেন? প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে রোমান্টিক ভাবে চিপস/জুস খাওয়ার পরে চিপসের খালি প্যাকেটটা কোথায় ফেলেছেন? জুসের প্যাকেট টা গেলো কোথায়? বাদামের ছোলা কোথায় ফেলেছেন? আপনি নিজেই তো একটা “জলাবদ্ধতা”!! যদি জিজ্ঞেস করি ঠিকমত ট্যাক্স আদায় করেছেন, তাহলে কি উত্তর দিবেন? বাসার ময়লা-আবর্জনা ডাষ্টবিনে না ফেলে ড্রেনে অথবা খালে ফেলে এসেছেন কেনো? ডাষ্টবিন চোখে দেখেন নি? খাওয়ার পরে কলার খোসাটা রাস্তায় নিক্ষেপ করেন কেনো? নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা যায় না? সিগারেট জ্বালিয়ে দিয়াশলাই এর কাঠি আর সুখটান দিয়ে সিগারেটের পরিত্যাক্ত ফিল্টার অংশটা রাস্তায় না ফেলে নিজের পকেটে জমিয়ে রাখতে পারেন নি? বলতে পারবেন আজকে অফিসে গিয়ে আপনি ঘুষ নেন নি? দূর্নীতির ফাইলে সাইন করেন নি? ঢালাও ভাবে কথায় কথায় সরকার আর সিটি-কর্পোরেশনকে গালি দিলে জলাবদ্ধতা নিরসন হয় না। দেশটা শুধু সরকারের না, আপনারও। আমাদের সবাইকে নিয়ে দেশ। আমরা ১৮ কোটি মানুষ, আমাদের ৩৬ কোটি হাত। এই ৩৬ কোটি হাত যদি একদিন দূর্নীতি না করে, একদিন অফিসে ঘুষ না নেই, একদিন কলার খোসা রাস্তায় না ফেলে,খালে অথবা ড্রেনে যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে তাহলে দেখবেন মাত্র ১৮ দিনে কিংবা ৩৬ দিনে দেশ পাল্টে গেছে। চলুন প্রত্যেকে নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি।দেশের জন্য দৈনিক অন্তত একটা ছোট ভালো কাজ করি, ১৮ কোটি মানুষ দৈনিক ১৮ কোটি ভালো কাজ করবে। একটা দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে এর চেয়ে বেশী আর কি লাগে ? মনে রাখবেন আজ আপনি প্রকৃতিকে যা দিবেন, প্রকৃতি আবার সেই জিনিস সময়মতো আপনাকে ফিরিয়ে দেবে। কারণ প্রকৃতি নিষ্ঠুর প্রতিশোধ থেকে আমি আপনি এমনকি প্রকৃতি ও বাঁচতে পারে না।

হুমায়ূন কবীর সবুজ, বার্তা সম্পাদক ‘দৈনিক কলম কথা’