বছর ঘুরে আবার এল পবিত্র ঈদুল আযহা। শান্তি, সৌহার্দ্য আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে এই উৎসব।

সব ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার দিন। সবাইকে ঈদ মোবারক!

পবিত্র ঈদুল আযহায় মহান আল্লাহর উদ্দেশে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করা মুসলমানদের প্রাচীন ঐতিহ্য। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আনুগত্য পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দিতে। স্নেহের পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) ছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। স্নেহ-মমতায় ভরা জগৎ-সংসারে পিতার পক্ষে আপন পুত্রকে কোরবানি দেওয়া অসম্ভব এক অগ্নিপরীক্ষা।

কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) বিনা দ্বিধায় আপন পুত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মহান আল্লাহর নির্দেশে ছুরির নিচে প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্থলে কোরবানি হয়ে যায় একটি দুম্বা।

এই প্রতীকী ঘটনার অন্তর্নিহিত বাণী স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকার। পবিত্র ঈদুল আযহার উদ্দেশ্য স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকা। পশু কোরবানি করা হয় প্রতীকী অর্থে। আসলে কোরবানি দিতে হয় মানুষের সব রিপুকে: কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা। সৎ পন্থায় উপার্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা পশু কোরবানির মাধ্যমেই তা সম্পন্ন হয়।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, কোরবানির এই মর্মবাণী আমাদের সব সময় স্মরণে থাকে না, বরং ত্যাগের সাধনার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে ভোগবিলাস ও অপচয়। আধ্যাত্মিকতাকে ছাপিয়ে যায় বস্তুগত আনুষ্ঠানিকতা। কোরবানির মধ্যে যে উৎসর্গের মহিমা রয়েছে, তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে ভোজনের উৎসব। অথচ এ দেশে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ অন্নকষ্টে ভোগে, অনেক শিশু অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধির শিকার। অনেক মানুষের মাথার ওপর আচ্ছাদন নেই, তারা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে, তীব্র শীতে কষ্ট পায়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানহীন এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করা এবং সাধ্যমতো তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো সামর্থ্যবানদের একান্ত কর্তব্য।

পবিত্র ঈদুল আযহায় সারা দেশে একই দিনে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানির কারণে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা একটি সমস্যা হয়ে ওঠে। তাই সবার উচিত যেখানে-সেখানে পশু জবাই করার প্রবণতা ত্যাগ করা। কোরবানির পর পশুর রক্ত, মলমূত্র, হাড় ইত্যাদি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা, নিজ নিজ লোকালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার।

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে এ সময় বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। তাদের সহযোগিতা করা উচিত সবার। কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচার ক্ষেত্রেও সততা-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো ধরনের অসদুপায় বা কারসাজির সুযোগ কেউ না পায়।


এই আনন্দময় উৎসবে ‘কলম কথা’ পরিবারের  পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, সংবাদদাতা, অফিস স্টাফ ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


পবিত্র ঈদুল আযহা’র আনন্দ হোক অমলিন।

কলমকথা/হুমায়ূন