নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বিকৃত মানসিকতা থেকেই মানুষ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংস হয়ে ওঠে। আমাদের সংবিধানে খুব পরিষ্কার করে লেখা আছে, “নারী এবং পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করবে।” তারপরও আমরা দেখছি, প্রতিনিয়ত নারীরা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, যা আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। যদিও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার বদ্ধপরিকর। তাই নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সরকারের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আইন থাকলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অপরাধী জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ব্যাপারে আমাদের দেশের কয়জন মুখ খুলতে পেরেছে? আজকে একটা রিপোর্ট করলে সে চাকরি করতে পারবে কিনা নিজেই জানে না। আবার বাসায় গিয়ে যদি স্বামীকে বলা হয়, “সহকর্মীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছি”, স্বামী বলবে, “চাকরি করার দরকার নেই।” তাহলে তাকে নিরাপত্তা কে দেবে?

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতা একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শিশুদের যৌন হয়রানির ঘটনাগুলোর সবই বাড়ির ভেতরে হয়। শুধু যৌন নির্যাতন নয়, মানসিক নির্যাতনও। এই জায়গাগুলোতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।আবার আমরা বেশ কিছু উদাহরণ পেয়েছি যে, সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও কিছু করা যাচ্ছে না। আইনের সঙ্গে যদি গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য সমন্বয় করা হয়, তাহলে সেটা খুব ভালো উদ্যোগ হবে। এর বাইরে সচেতনতার তো একটি বড় ভূমিকা থেকেই যায়।

গণমাধ্যমে নারী নির্যাতন বিষয়ক প্রতিবেদন পরিবেশনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে আগে “গণধর্ষণ” শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো। এর পরিবর্তে আমরা এখন ব্যবহার করি “সংঘবদ্ধ ধর্ষণ”। কারণ “গণধর্ষণ” একটি ভিন্ন মেসেজ দেয়। সংবাদমাধ্যমগুলো এসব পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমরা এখন সংবাদমাধ্যমে বলি না– “ধর্ষিতা”, আমরা বলি– “ধর্ষণের শিকার”।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। আমাদের সরকার নারী নির্যাতন বন্ধ, নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি “যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’-এর বদলে “মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের” বিধান রাখা হয়েছে। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে।’

অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডিএনএ প্রোফাইলিং ও স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে।’

ইউএন উইমেন প্রকাশিত তথ্য মতে, বিশ্বে ৩৫ শতাংশ নারী বা প্রায় প্রতি তিনজনে একজন নারী তার জীবন পরিক্রমায় শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘটে আপনজনের দ্বারা। সহিংসতার স্বীকার ৪০ শতাংশের কম নারী সহায়তা পেয়ে থাকে। বিশ্বে মোট মানব পাচারের ৭২ শতাংশ নারী ও শিশু। তাই নারীর প্রতি সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতন ও অপরাধ নির্মূল করার জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা নারীর মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ। এই নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে সরকারের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতামুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।