সারাদেশের রেলক্রসিংয়ের ৮২ শতাংশই অরক্ষিত। এসব ক্রসিংয়ে ট্রেন চলার সময় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেই। পাহারাদারও নেই। এ কারণে রেলক্রসিং যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ছয় বছরে ট্রেন দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়েছে, তার ৮৩ শতাংশই মারা গেছে রেলক্রসিংয়ে। গত সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজির মোড় রেলক্রসিংয়ে ভটভটিতে ট্রেনের ধাক্কায় তিনজন নিহত হন।

এ ঘটনার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে ওই রেলক্রসিংটিসহ আরও একটি রেলক্রসিংয়ে বাঁশের বার বসানো হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে স্থায়ীভাবে গেট নির্মাণ ও পরিচালনা না করা পর্যন্ত পৌরসভার নিয়োজিত লোক স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে গেট পরিচালনা করবেন। রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী: সারাদেশে মোট রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১।

এগুলোর মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩২১টির। এসব ক্রসিংয়ের বেশির ভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কে। আরও আছে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কে। সরকারের পাঁচটি সংস্থা রেললাইনের ওপর সড়ক নির্মাণ করার কারণে রেলক্রসিং সৃষ্টি হয়েছে।

রেলের নিজেদেরও রেলক্রসিং আছে। রেলসহ এই সরকারি সংস্থাগুলো গত এক দশকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু রেলক্রসিং সুরক্ষায় কেউ দায়িত্ব নেয়নি। বরং দায় চাপিয়েছে একে অপরের। ফলে একের পর এক রেলক্রসিংয়ে মানুষ মারা গেলেও কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। রেলের তথ্য থেকে জানা যায়: ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন।

এর মধ্যে ১৪৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন রেলক্রসিংয়ে। আমরা মনে করি এগুলো নিছক দুর্ঘটনা নয়। কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ। যে সংস্থার সড়ক হোক না কেন রেলক্রসিংয়ে সুরক্ষা না দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।

সঙ্গত কারণে রেলক্রসিংয়ের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের হলেও এইসব হত্যাকাণ্ডের দায় কেউ স্বীকার করে না। আমরা আশা করি এই বিষয়ে সরকার দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেবে যা সব সংস্থা সমন্বয় করে রেলক্রসিংগুলোকে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সংস্কার করবে এবং জনমানুষের চলাচলকে নিরাপদ করবে। নতুবা এই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্র পরিচালনার একটি দুর্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত হবে। যা সরকারে জন্য শুভ কোন কিছু বয়ে আনবে না।

 

কলমকথা/বি সুলতানা