গণমাধ্যমগুলোতে খবর এসেছে, এক জায়গার ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে আরেক জায়গায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ও আগুন। এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টের নিচে ধর্মীয় অবমাননামূলক মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে তার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। একপর্যায়ে তারা ৫-৬টি ঘর ভাঙচুর করে। পরে একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘর পুড়ে গেছে।

ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্রে করে দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়। গত বছর মার্চ মাসে সুনামগঞ্জেও এমন ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা ফেসবুকে দেয়া পোস্টে ধর্মীয় অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। ঘটনাগুলো দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।

হামলার ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবকেই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী।

আসলে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রচারণায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর প্রচেষ্টা রয়েছে এখনো। আমরা বলি আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু ইদানীংকালে অসহিষ্ণুতা ও অধৈর্যের যে প্রকাশ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

সত্যি সত্যি ধর্মের অবমাননা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না অথবা হলেও প্রকৃত অপরাধীর পরিবর্তে টার্গেট হয়ে পড়ছে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এ প্রবণতা বিপজ্জনক। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে প্রতিহত না করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীরবতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির দায় রয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতির প্রয়োগ না থাকা, আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া এবং আইনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।

সংখ্যালঘুদের ওপর এ রকম আক্রমণ জাতীয় সংহতির ওপর বিরাট আঘাত। এই হামলার ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশে মিলেমিশে বসবাসের যে সংস্কৃতি তা বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা হারাবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। ঘটা প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হোক। আমরা চাই- রামু, নাসিরনগর, মালোপাড়া কিংবা সাঁওতালপল্লির ঘটনার মামলাগুলো নতুন গতি পাক। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ মেরামত করাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করাও জরুরি।

সুমন চক্রবর্তী
প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক কলম কথা