সোমবার শেষ রোডওয়ে স্লাব বসানোর মধ্য দিয়ে সড়কপথেও পূর্ণাঙ্গরূপ পেল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। মোট ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে আগেই বসানো হয়েছিল ২ হাজার ৯১৪টি; বাকি তিনটি স্লাবের মধ্যে রোববার রাতে বসানো হয় দুটি।

এখন আমরা জোর গলায় বলতে পারি, পদ্মা সেতু আর শুধু স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উদ্বোধনের দিকে। আগেই শেষ হয়েছে দ্বিতল সেতুর রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ। জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ মূল সেতুর কাজের আর বাকি মাত্র ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান বসানো হয়। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে স্বপ্ন ও গর্বের এ সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর সংস্থাটিকে অনুসরণ করে আরও তিনটি দাতা সংস্থা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে যায়। বস্তুত এ সেতু নির্মাণে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এসেছে নানা বাধা। শেষ পর্যন্ত সব ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ। নিজেদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী পদক্ষেপ বিশ্বে আমাদের সক্ষমতার বিষয়ে নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। এজন্য এই সেতু আমাদের কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি তিন ধরনের পরিবর্তন আসবে। প্রথমত, এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। ফলে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে, বিনিয়োগ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তারা তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরাসরি পাঠাতে পারবেন। ফলে পণ্যের ভালো দাম পাওয়ার মধ্য দিয়ে উৎপাদনে মনোযোগী হবেন তারা, যা আমাদের কৃষি খাতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তৃতীয়ত, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতি ঘটবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে যাতে কোনোরকম ঘাটতি বা ত্রুটি না হয়, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।