তরুণদের আর্থিক সুবিধা দেয় না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। উদীয়মান তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে সফল হওয়া কঠিন হবে। অনেক ভালো উদ্যোক্তা অর্থের অভাবে সফল হতে পারছেন না। আর্থিক সেবা পেতে যেসব প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেসব দূর করতে হবে।

এছাড়া শতভাগ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাস্তবায়নে নারীদের বিশেষায়িত আর্থিক সেবা দেওয়া প্রয়োজন। তাদের স্বল্প সুদে আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিতে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।

শনিবার যশোরের ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে ‘জেন্ডার রেপন্সসিভ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী কর্মশালার শেষ দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

২০২৬ সালের মধ্যে সব পূর্ণবয়স্ক মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনা এবং জাতীয় অন্তর্ভুক্তি কৌশল (এনএফআইএসবি) বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিআরডি) কর্মশালাটির আয়োজন করে।

কর্মশালার লক্ষ্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নারীরা কেন পিছিয়ে-তা খুঁজে বের করা। আরও বেশি নারীকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারীরা যাতে অধিক সহায়ক হতে পারেন। জেন্ডার গ্যাপ ইন ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসান (জিজিআইএফআই) প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সিআরডির পরামর্শক ড. লীলা রশীদ।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এসব এনজিওর উচ্চ সুদহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যা নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। যেভাবেই হোক ব্যাংকের স্বল্প সুদের আর্থিক সুবিধার আওতায় নারীদের আনতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং, উপ-শাখা খোলাসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। যা এরইমধ্যে দারুণভাবে সাড়া ফেলেছে।

বিআইবিএম অধ্যাপক (সিলেকশন গ্রেড) এবং বিআইবিএম-সিআরডি প্রকল্পের স্টাডি টিম লিডার ড. শাহ্ মো. আহসান হাবীব বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে (ব্যাংক, বিমা) নারীদের একটি হিসাব থাকতে হবে। যেখানে নারীদের অন্যসব আর্থিক সেবার পাশাপাশি ঋণ প্রয়োজন হলেও যাতে পেতে পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং মাইক্রোফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনগুলো (এমএফআইএস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিআইবিএম অধ্যাপক (সিলেকশন গ্রেড) এবং পরিচালক (ঢাকা স্কুল অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট) নেহাল আহমেদ নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি তুলে ধরেন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে বলে তিনি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আয়েশা বানু বলেন, জেন্ডার সমতা ও ন্যায্যতা প্রয়োজন। যা পরিবার থেকে আসতে হবে। বিষয়টি খুব গভীরভাবে নীতিনির্ধারণী মহল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের মানুষকে বুঝতে হবে। এটি করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।

ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা তুলে ধরে রওশন ক্রিয়েশনস নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রওশন আরা বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণদের আর্থিক সুবিধা দেয় না। উদীয়মান তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় অনেক ভালো উদ্যোক্তা অর্থের অভাবে সফল হতে পারছেন না। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। এজন্য সব পর্যায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে সিনিয়র ব্যাংকার, শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিআইবিএম সিনিয়র অনুষদ সদস্য, কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।