ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা শিল্পোদ্যোক্তা ব্যবসায় বা ব্যবসায়িক ধারা পরিবর্তনের রূপকার। তিনি ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে উৎপাদনের উপকরণগুলো একত্র করেন। এরপর নিজস্ব কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায়কে সাফল্যের দিকে নিয়ে যান।

মূলত উদ্যোক্তার এ কর্মপ্রচেষ্টাকেই ব্যবসায় উদ্যোগ বলা হয়। তাই ব্যবসায় উদ্যোগকে ভালোভাবে বুঝতে হলে এর বিভিন্ন দিক ও উপাদান সম্পর্কে জানতে হবে।

ছবি : ইন্টারনেট

নিচে ব্যবসায় উদ্যোগের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

১. বৈধ অর্থনৈতিক কাজ (Legal economic work):

ব্যবসায় উদ্যোগের কাজটি অবশ্যই অর্থনৈতিক হতে হবে। অর্থনৈতিক কাজ বলতে অর্থ উপার্জন বা আয় – রোজগারের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করাকে বোঝায়। তবে এ কাজটি অবশ্যই দেশের আইনে বৈধ হতে হবে। যেমন: কেউ কমলালেবুর রস দিয়ে মদের কারখানা চালু করলে আমরা কাজটিকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলব না। কারণ এ ধরনের কাজকে আমাদের দেশে বৈধতা দেওয়া হয়নি।

২. মুনাফা অর্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট (Related with earning profit):

ব্যবসায় উদ্যোগকে অবশ্যই মুনাফার সাথে। সংশ্লিষ্ট হতে হবে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তার কর্মসংস্থানের সাথে সাথে মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা থাকে। উদ্যোক্তা তার কাজে সফল হলে অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারেন।

৩. ঝুঁকি নেওয়া (Taking risk):

আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাকে ঝুঁকি বলে । ব্যবসায় উদ্যোগে সব সময় ঝুঁকি বিদ্যমান। কারণ উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে মুনাফা হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন, অর্থসংস্থান প্রভৃতি বিষয়ে উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয়। কথায় আছে No risk, no gain; High risk, high gain. অর্থাৎ, ঝুঁকি নেই তো মুনাফাও নেই; আর ঝুঁকি বেশি তো মুনাফাও বেশি। তবে এ ঝুঁকি তাকে মধ্যম মাত্রায় নিতে হয়।

৪. সৃজনশীল ও উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ড (Creative and innovative activity):

নতুন কোনো ধারণা প্রবর্তন করাই সৃজনশীলতা। উদ্যোক্তা সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন। সৃজনশীল মানসিকতার মাধ্যমে তিনি উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করেন। তিনি পুরনো পণ্য ও পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন পণ্য ও উন্নত পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তিনি কাঁচামালের নতুন উৎস আবিষ্কার করেন ও পণ্যের নতুন বাজার তৈরি করেন। এই সৃজনশীলতা বা উদ্যোগ নেওয়া উদ্যোক্তার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। তাই উদ্যোগ কোনো গতানুগতিক ব্যবসায় কর্মকাণ্ড নয়।

৫. উৎপাদনের উপকরণসমূহ সংগ্রহ (Collecting factors of production):

ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরণসমূহ তথা ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনকে একত্র করতে হয়। নতুন ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য স্থান, শ্রমিক ও অর্থের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন বিভাগের সাথে এসব উপাদানের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সংগঠিত করতে হয়। এরপর তা সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে পরিচালনা করতে হয়।

৬. কর্মসংস্থান সৃষ্টি (Creating employment):

ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে উদ্যোক্তার নিজের ও অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ব্যবসায় উদ্যোগের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পণ্য বিপণনে অনেক লোকের দরকার হয়। তাই ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

৭. নতুন সম্পদ সৃষ্টি (Creation of new wealth):

ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের বিরাজমান বস্তুগত সম্পদ সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উযোগী করা হয়। যেমন: উদ্যোক্তা কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি করেন। এতে সম্পদের মূল্যমান বাড়ে।

৮. পণ্য বা সেবা (Product or service):

ব্যবসায় উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফলাফল হলো পণ্য বা সেবা। এই পণ্য বা সেবার আর্থিক মূল্য থাকতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার ধারণা থেকেই ব্যবসায় উদ্যোগ সৃষ্টি হয়।

৯. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic development):

ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে অবশ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে বেকার সমস্যা কমে। এতে দেশের জাতীয় আয় বাড়ে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।

১০. সামাজিক দায়বদ্ধতা (Social responsibility):

ব্যবসায় উদ্যোগে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। সমাজকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ে উদ্যোগের কাজ পরিচালিত হয়। এজন্য ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের মঙ্গলময় ও কল্যাণকর কাজ করতে হবে।

সুতরাং বলা যায়, ব্যবসায় উদ্যোগ হলো কোনো দেশের অর্থনীতির জীবনীশক্তি। উদ্যোগের বিস্তারের সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি জড়িত। এটি বিশেষ ধরনের কাজ, যা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।

কলমকথা/এমএনহাসান