একজন সফল উদ্যোক্তার সবচেয়ে দরকারি গুণ কোনটি? ক্রিয়েটিভিটি বা নিত্যনতুন আইডিয়া সৃষ্টির ক্ষমতা, তাই না? আপনি যদি এ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে থাকেন তবে খুব সম্ভবত বাস্তবতা থেকে বেশ দূরে রয়েছেন। কারণ এক গবেষণায় দেখা যায়, ৫৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে ‘যোগাযোগ দক্ষতা’কে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেছেন।

তার পরে রয়েছে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান দেয়ার ক্ষমতা। টাইম ম্যানেজমেন্ট ও যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতার পরে স্থান হয়েছে ক্রিয়েটিভির! হয়তো সে কারণেই ওয়ারেন বাফেট বলেন, আমাকে যদি দুজন প্রার্থীর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলেন যাদের একজনের আইকিউ অনেক বেশি এবং অন্যজন ধৈর্যশীল ও ডিসিপ্লিনড। তাহলে আমি পরের জনকেই পছন্দ করব। কারণ ব্যবসায়ে তীক্ষ মেধার চেয়ে ‘লেগে থাকা’র গুণ অনেক বেশি দরকার হয়।

আমাদের দেশে ঠিক কতজন মানুষ প্রতি বছর উদ্যোক্তা হতে চেষ্টা করেন। তাদের কত শতাংশ টিকে থাকেন বা ঝরে যান সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া মুশকিল। সম্প্রতি কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেগুলো মূলত গণমাধ্যমে প্রকাশিত নানা রিপোর্ট বা ফিচার থেকে পাওয়া। ফলে একই বিষয়ে তথ্যের ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।

তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়। তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের করণীয় ঠিক করে। তাছাড়া কিছু সংস্থা এখন বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তাচিত্র নিয়মিত তুলে ধরতে চেষ্টা করছে। তেমন নানা উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভর করেই আজকের নিবন্ধটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকায় শতকরা চারজন, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ায় দুজন এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে একজন ব্যবসা শুরুর তিন মাসের মধ্যেই সেটা ছেড়ে দেন। অর্থাৎ প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ বা চাপ সহ্য করতে পারেন না। অন্যদিকে মাত্র তিন মাসের মধ্যে লাভের মুখ দেখার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। সেদিক থেকে ওমান, মিসর, পানামা ও কলম্বিয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে সফলতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ (১৮ দশমিক ৭ শতাংশ) উদ্যোক্তা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। আমাদের দেশেও এ চিত্র প্রায় অভিন্ন। কারণ অধিকাংশ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন তাদের উত্তরাধিকাররা। তাছাড়া প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিগুলো মূলত পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লাতিন আমেরিকানদের মধ্যে পারিবারিক ব্যবসা শুরুর প্রবণতা বেশি। সেখানে সবাই শুরুতে ভালো করে ব্যাপারটা তেমন নয়। তবে এমনও দেখা গেছে, প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তার চেষ্টা পরবর্তী সময়ে কেউ একজন ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটিয়েছেন। তাই তারা পারিবারিক উদ্যোগগুলো কষ্ট করে হলেও টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকেন। বংশের কেউ না কেউ একদিন সফল হবে বলে তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

বিশ্বময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মুনাফাবিষয়ক তথ্য বলছে, প্রতি চারজনের তিনজনই (৭৮ শতাংশ) চলমান ব্যবসায়ে লাভ করছেন। অধিকাংশ উদ্যোক্তাকে আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজস্ব (পরিবার বা বন্ধু থেকে সংগৃহীত) উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়। শতকরা ৬২ জন এমন পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য পান না বা তার জন্য অপেক্ষা করার মতো যথেষ্ট সময় হাতে থাকে না।

উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিজনেস বিষয়ে ডিগ্রি থাকা কি জরুরি? না, আসলে কোনো বিষয়েই স্নাতক হওয়া জরুরি নয়। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দুনিয়ায় মাত্র ৯ শতাংশ উদ্যোক্তার ব্যাচেলর ডিগ্রি রয়েছে। আর ৩০ শতাংশের রয়েছে হাইস্কুল পাসের যোগ্যতা! যেকোনো পরামর্শের জন্য উদ্যোক্তাদের সিংহভাগ (২৬ শতাংশ) সর্বপ্রথম সাবেক ও বর্তমান সহকর্মীদের সাহায্য চান। তার পর ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হন ১৯ শতাংশ। আর বই পড়ে সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করেন শতকরা ১৪ জন।

আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশই তরুণ ও যুবক। তারা মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ তরুণনির্ভর এ অবস্থার সুবিধা আদায় করতে হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হওয়া দরকার। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর ২২-২৭ লাখ যুবক আমাদের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়। এর মধ্যে সাত লাখ তরুণ স্বল্প সময়ের মধ্যে কর্মে যুক্ত হতে পারে। বর্তমানে কর্মরতদের প্রায় ৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে।