ভোলার দৌলতখান উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় বিদেশি কবুতরের খামার দিয়ে সফল হয়েছেন মীর মো. মেহেদী হাসান। বাসার ছাদে বিদেশি নানা প্রজাতির দেড়শ জোড়া কবুতর নিয়ে গড়ে তুলেছেন মীর পিজন লফট। স্নাতক শেষ করা মেহেদীর বর্তমানে মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। কোনো মাসে এর চেয়ে বেশি আয় হয়।
কঠোর পরিশ্রম ও কবুতরের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা মেহেদীকে সফলতা এনে দিয়েছে। তার এখানে এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের পর্যন্ত কবুতর রয়েছে। মেহেদীর দেখাদেখি অনেকেই কবুতর পালনে আগ্রহী হচ্ছে। তার থেকে কবুতর কিনে বাংলাবাজারে একটি কবুতরের দোকান চালু হয়েছে। তার থেকে পরামর্শ নিয়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ কবুতর পালন শুরু করেছেন।
খামারে গিয়ে দেখা যায়, কবুতরের পরিচর্যায় ব্যস্ত মেহেদী। চারপাশে লোহার গ্রিল ও ওপরে টিনশেড দিয়ে তৈরি করেছে খামারটি। খাঁচার ভেতর শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের কবুতর। মেহেদী বলেন, ২০১৭ সালে স্নাতক শেষ করে শখের বসে ২০ জোড়া কবুতর নিয়ে খামার শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই কবুতরের প্রতি ভালোবাসা ও মমতা রয়েছে। ফেসবুকে খামারের নামে একটি পেইজ চালু করি। তখন দেখলাম বেশ সাড়া পাচ্ছি।
তিনি বলেন, ২ বছরে খামারে কবুতরের সংখ্যা বেড়েছে। এখানকার উৎপাদিত কবুতরের বাচ্চা অনলাইনের মাধ্যমে ভোলা, বরিশাল, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। খামারে বিভিন্ন জাতের কবুতরের মধ্যে এক লাখ টাকা মূল্যের আরএসপি কোএলমোন্ড জাতের কবুতর রয়েছে। যার প্রতি জোড়া বাচ্চার মূল্য ৪০ হাজার টাকা। রয়েছে ৪০ হাজার টাকা দামের লাহরি কবুতর। যার বাচ্চার দাম ১৫ হাজার টাকা।
হোয়াইট টপ বোখারা। যার দাম (প্রাপ্তবয়স্ক) জোড়া প্রতি বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা, আর বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এছাড়া আরএসপি পোর্টার রয়েছে ৩০ হাজার টাকা দামের। এগুলোর বাচ্চা বিক্রি হয় ৮ হাজার টাকায়। পূর্ণ বয়স্ক ডেনিস (সাদা) জোড়া বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা, ডেনিস (হলুদ) ১৫ হাজার, হাউস পিজন ১২ হাজার, ১০ হাজার টাকার কোকা বা সিরাজসহ বিভিন্ন জাতের আকর্ষণীয় রঙের কবুতর রয়েছে।
এছাড়া পেনসিল পোর্টার, হেনা পোর্টার, কুমারিয়ান, উলো মালটেসসহ ৩০ প্রজাতির বেশি কবুতর রয়েছে তার খামারে। মেহেদী আরো বলেন, কবুতর পালনে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা সময় দিলেই হয়। এসব কবুতরকে ধান, গম, চিনা, অ্যাঙরা, ডাবলিসহ প্রায় ১৫ ধরনের খাবার মিশিয়ে দিতে হয়।
দৈনিক ১ হাজার টাকার খাবার দিতে হয়। কবুতরের তেমন রোগ হয় না। আর রোগ হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে চিকিৎসা সর্ম্পকে জানা যায়। একই সঙ্গে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে রোগের সমাধান পাওয়া যায়। বাংলাবাজার এলাকায় মেহেদীর থেকে কবুতর নিয়ে দোকান দিয়েছেন মো. ফয়সাল। তিনি বলেন, এই এলাকায় দেশি কবুতরের চাহিদা থাকলেও বিদেশির তেমন বাজার ছিল না। কিন্তু মেহেদীর খামারের সফলতা দেখে এখন অনেকেই উন্নত জাতের কবুতর কিনছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, কবুতর পালন একটি শখের বিষয় হলেও তা বর্তমানে বেশ লাভজনক। এর মাধ্যমে বেকারত্ব দূরসহ বাড়তি আয়ের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের খামার করা একটি ভালো উদ্যোগ। বর্তমানে জেলায় অনেকেই বিদেশি কবুতর পালন করছেন। যুব সমাজকে যদি এই শিল্পের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তবে এই খাত আরো সমৃদ্ধ হবে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। তথ্যসূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।