নিরব কুমার দাস, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ: নওগাঁর সাপাহারে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ইব্রাহিম হোসেন। প্রথম বছর সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় বছর সফলতা পেয়েছেন তিনি। তার এই সফলতা দেখে উৎসাহিত হয়েছেন অন্য কৃষকরাও। ইব্রাহিম উপজেলার সীমান্তবর্তী হাঁপানিয়া বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, জেলার বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার। এরই মধ্যে এ উপজেলাটি আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বরেন্দ্র ভূমির মাটিতে স্ট্রবেরি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক ইব্রাহিম হোসেন। এ এলাকার স্ট্রবেরি স্বাদের দিক দিয়েও বেশ মিষ্টি।

২০২০ সালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় বেড়াতে গিয়ে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি ফলের চাষ দেখেন ইব্রাহিম। গ্রামে ফিরে এসে স্ট্রবেরি চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর প্রায় দুই বিঘা জমি ইজারা নিয়ে সেখানে শিবগঞ্জ থেকে স্ট্রবেরির চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথমবার চাষে ভালো ফলাফল অর্জন করতে না পারলেও লোকসান হয়নি। হতাশ না হয়ে আবারও স্ট্রবেরি চাষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর নিজেই চারা উৎপাদন ও সংরক্ষণ করেন। ১৭ হাজার টাকা বিঘা দরে পৌনে তিন বিঘা জমি ইজারা নিয়ে গত বছরের (২০২১ সাল) অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে চারা রোপণ করেন ইব্রাহিম।

অল্পদিনেই স্ট্রবেরি গাছে ক্ষেত সবুজ হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথম দফায় ৪০০ গ্রাম ফল সংগ্রহ হয়। এর দুইদিন পর পাওয়া যায় ৫ কেজি। আবারও পরের দুইদিন পর ১০ কেজি পাওয়া যায়। দুইদিন পর পর ফল সংগ্রহ করা হয়। এভাবে ক্ষেতে বাড়তে থাকে স্ট্রবেরির উৎপাদন।

ক্ষেতে উৎপাদিত স্ট্রবেরি সরাসরি রাজধানী ঢাকার কারওরান বাজারে ফলের আড়তগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এতে দামও ভালো পাওয়া যায়। প্রথম দিকে প্রতি কেজি স্ট্রবেরি ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দরে বিক্রি করেছেন তিনি। বর্তমানে দাম কমে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে দাম পাইকারি হিসেবে বিক্রি করছেন।

চলতি মৌসুমে ওই পরিমাণ জমির জন্য শ্রমিক, কীটনাশক, সেচ ও নেটিংসহ (জাল) যাবতীয় খরচ বাবদ প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন ইব্রাহিম হোসেন। স্ট্রবেরি ছাড়াও বেশ কয়েক বিঘা জমিতে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম এবং উন্নত জাতের মাল্টা বাগান রয়েছে ইব্রাহিমের। সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামীতে পূর্ণভবা নদীর পশ্চিম তীরে স্ট্রবেরির প্রজেক্ট তৈরি করবেন বলে জানান তিনি।

স্ট্রবেরি চাষি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ২ বিঘা ১৫ কাঠা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় সাড়ে ৪ হাজার পিস হিসেবে চারা লাগানো হয়েছে। জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ফল সংগ্রহ শুরু হয়। ক্ষেত থেকে ১৩০-১৩৫ কেজি ফল পাওয়া গেছে। শুরুতে অল্প পরিমাণ ফল উৎপাদন হওয়ায় তখন দাম পেয়েছি ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি। যখন বেশি পরিমাণ স্ট্রবেরি পাওয়া যায় তখন ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি দাম পেয়েছি। বর্তমানে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি দামে পাইকারি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহের পর তা পরিবারের সদস্যরা মিলে বক্সে (কার্টুনে) প্যাকেটজাত করে সাপাহার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসে করে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, আমার স্ট্রবেরি চাষ দেখে অনেকেই চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কিভাবে চাষাবাদ করতে হবে সেসব বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে স্ট্রবেরি চাষে বেশ পরিশ্রম করতে হয় বলে জানান তিনি।

একই গ্রামে স্ট্রবেরি চাষি আব্দুল্লাহ বলেন, গত বছর ইব্রাহিম হোসেন স্ট্রবেরি চাষ করেছিলেন। সেসময় তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলাম। তার পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় এবার ১০ শতাংশ জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। চারা তার কাছ থেকেই সংগ্রহ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। নতুন জাতের ফল হওয়ায় দামও ভালো পেয়েছি। তবে স্ট্রবেরি চাষ লাভজনক মনে হয়েছে।

সাপাহার উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন, স্ট্রবেরি রসালো ও পুষ্টিকর ফল। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় এটি সারাবিশ্বে সমাদৃত। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং মাসের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।