মোঃ শরিফ উদ্দিন, শেরপুর: শেরপুরে চোরাই কাজে ব্যবহৃত পিকআপসহ আন্তঃজেলা গরু চোর চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ সব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান রাসেল।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মো. হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব (৫৫), মো. মুকুল মিয়া (৩০), মো. সম্রাট (২৫), মো. জীবন (২৫), মো. রাশেদুল ওরফে আসাদুল (৩২), মো. সুজন মিয়া (২৮) মো. রইচ উদ্দিন (৩৮) ও মো. আমিন মিয়া (২৫)।
পুলিশ সুপার জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শ্রীবরদী উপজেলার বকচর পূর্বপাড়া গ্রামে মো. আব্দুল মমিন (৬০) এর গোয়ালঘরের তালা ভেঙ্গে অজ্ঞাতনামা চোরচক্র ৪টি গাভী ও ৪টি বাছুর চুরি করে পিকআপ ট্রাকে উঠাচ্ছিল। এ সময় আব্দুল মমিনের ভাতিজা মো. রফিকুল ইসলাম শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গরু ট্রাকে উঠানো দেখে চিৎকার শুরু করলে চোরচক্র গরুসহ ট্রাক নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় আব্দুল মমিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা চোরচক্রের বিরুদ্ধে শ্রীবরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের শনাক্তকরনসহ গ্রেফতারের জন্য তদন্তে নামে শ্রীবরদী থানা পুলিশ। মামলার তদন্তকালে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে শ্রীবরদী থানা পুলিশের কয়েকটি টিম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার টুপকারচর গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে মো. হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে আসামি মো. মুকুল মিয়াকে গ্রেফতার করে।
পরে তার দেওয়া তথ্যমতে, গত ৯ অক্টোবর গাজীপুরের দক্ষিণ সালনা এলাকা থেকে আসামি মো. সম্রাট, মো. জীবন, মো. রাশেদুল ওরফে আসাদুল, মো. সুজন মিয়া, মো. রইচ উদ্দিন ও মো. আমিন মিয়াকে গ্রেফতার কর হয়। পরে সালনা এলাকায় থেকে গরু চোরাই কাজে ব্যবহৃত হলুদ ও নীল রঙের টাটা ট্রাক যার রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো ড-১৪-৮৬৬৮ উদ্ধার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানিয়েছে, চোরাই গরুগুলো তারা ডিএমপির তুরাগ থানাধীন বেড়ীবাধ এলাকার ধৌর নামক স্থানে মো. খাইরুল ইসলামের (৩৮) কাছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে তারা। তাকে গ্রেফতার ও চোরাই গরু উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে সুজন মিয়া, মো. রাশেদুল ওরফে আসাদুল আদালতে চুরির দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। বাকী আসামিদের ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আরও জানান, আসামি হাবিবুর রহমান হাবিব এলাকায় ঘুরে ঘুরে কোন বাড়িতে দামি গরু আছে সেই তথ্য অন্যান্য চোরদের দেয়। আর আসামি মো. মুকুল মিয়া চোরাই কাজে ব্যবহৃত ট্রাকটির চালক। পলাতক আসামি মো. খাইরুল ইসলাম ট্রাকটির মালিক। সে ট্রাকের বডি উচু করে তৈরি করেছে শুধুমাত্র গরু চোরাই কাজে ব্যবহার করার জন্য।
গ্রেফতারকৃত প্রত্যেকটি আসারিদ আন্তঃজেলা গরু চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য। তাদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়। তাহারা দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের সালনা, ঢাকার আশুলিয়া ও তুরাগ বেড়ীবাধ এলাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন জেলায় গরু চুরি করে আসছে।
প্রেস ব্রিফিং-এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. সোহেল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া, সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) আফরোজা নাজনীন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহমেদ বাদল, শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস, ডিআইও-১ জাহাঙ্গীর আলমসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।