আড্ডা শব্দটি শুনলেই মনে পড়ে যায় কত স্মৃতি। সবুজ ঘাসের উপর বসে অথবা শাখা-প্রশাখা ছড়ানো বিশাল গাছের নিচে নয়তো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টং দোকানে চলতো আড্ডা আর ছোটখাটো খুনসুটি। হরেক রকমের জায়গাতেই আড্ডা দেওয়া হয়েছে আমাদের। বিভিন্ন আড্ডার নামো শুনেছি আমরা যেমন: রাজনৈতিক আড্ডা, অফিসের আড্ডা, চায়ের কাপে আড্ডা, গলির মোড়ে আড্ডা আরো কত হরেক রকম নাম পাওয়া যাবে। কিন্তু ক্লাস রুমের আড্ডা গুলো ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে পাওয়া একটি বিনোদন।
ক্লাস রুম বলতে আমরা সাধারণত বুঝি শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবে বা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বহিঃপ্রকাশ করবে তার চিন্তা ও অভিজ্ঞতা। শুধুমাত্র পাঠদান ছাড়াও যে ক্লাস রুমের আড্ডার মাধ্যমে হতে পারে সুস্থ বিনোদন তা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যে ক্লাস রুমের আড্ডায় নিজেকে বিকিয়ে দেয়নি। একসাথে বসে গল্প, কথায়, আলাপচারিতায় মুহু মুহু হয়ে উঠতো ক্লাস রুম। ক্লাস টাইমের আগেই আসতো অনেকে। ক্লাস শুরুর আগ পর্যন্ত সময় থাকে বেশ কিছুক্ষণ। একসাথে সবাই না আসলেও ক্লাসের একপাশের বেঞ্জ গুলোয় জমিয়ে তোলে আড্ডা, শুরু হয় নানা গল্প। বাড়ি থেকে স্কুলে আসার গল্প, স্যারের পড়া রেডি করে এনেছে কিনা এনিয়ে চলতে থাকে আড্ডা। ধীরে ধীরে আড্ডায় যোগদেয় অনেকে। দেখতে দেখতে বিস্তার লাভ করে আড্ডার পরিধি। মজার ব্যাপার হলো যখনই কোন ভাবে তারা বুঝতে পারে শিক্ষক ডুকবে ক্লাস রুমে, মূহুর্তেই চলতে থাকা আড্ডার জটলা ভেঙ্গে গিয়ে যে যার মতো বসে যায় নিজের জায়গায়। দেখে মনেই হবে না ক্ষাণিক আগে এখানেই জমে উঠেছিল আড্ডার পসরা।
অতঃপর শিক্ষক পাঠদান শেষে ক্লাস থেকে বের হওয়া মাত্রই ক্লাসের মধ্যে গুণগুণ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে ক্লাস রুম। নিজের বেঞ্চে বসা চার/পাঁচ জন মিলিয়ে শুরু করে আবার গল্পের আড্ডা। আড্ডা চলতে থাকে যতক্ষণ না অন্য শিক্ষক এসে ক্লাস শুরু করে।
স্তব্ধ, ফাঁকা রুম গুলোয় প্রাণ ফিরে আনে এই ক্লাস রুমের আড্ডা। কয়েকজন হাই-বেঞ্চের উপরে, তিন জনের সীটে পাঁচ জন কষ্ট করে বসে চলছে আড্ডা। কেউ প্রাণ খুলে হাসছে, কেউ বা সবাইকে হাসানোর মাধ্যম হচ্ছে। সবার মধ্যে একটা প্রাণ চাঞ্চল্যতার টেউ বয়ে যাচ্ছে। ক্লাস শুরুর আগে বা শেষে আবার হয়তো ক্লাসের ফাঁকে, মূহুর্তেই গড়ে উঠে ক্লাস রুমের আড্ডা। আড্ডার স্থায়ীত্ব কখনো ঘন্টা পাড় হচ্ছে কখনো বা অল্প সময়, নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা নেই এখানে।
জীবনের আড্ডা গুলোকে যদি বিভিন্ন শ্রেনিতে ভাগ করা যায় তবে ক্লাস রুমের আড্ডার প্রভাব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আড্ডাকে শুধুমাত্র বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এখান থেকেও শিখতে পারে বর্তমান প্রজন্ম।
আমরা পত্র-পত্রিকায় অনেক কিশোর গ্যাং এর নাম শুনেছি, দেখেছি তাদের কর্মকান্ড। কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তারা। মাদক গ্রহণ থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হচ্ছে তারা। তাদের এই উত্থান হয়তো মহল্লার কোন গলির মোড়ের আড্ডার মধ্য দিয়ে, ধীরে ধীরে তার প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।
কিন্তু ক্লাস রুমের আড্ডার মধ্য দিয়ে সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি শেখার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। আড্ডাকে মূল্যবান সময়ে পরিণত করেছে ক্লাস রুমের আড্ডা। এখান থেকেই বেরিয়ে আসছে নতুন কোন চিন্তার বিষয়, জানার আগ্রহ সৃষ্টি করছে অজানা কোন বিষয়ের প্রতি অথবা বেড়িয়ে আসছে জটিল কোন সমস্যার একটি নয় হাজারটি সমাধান। এখানে চাইলেও কেউ মাদক নিয়ে আসবে না পরিকল্পনা করবে না কোন সন্ত্রাসী কাজের। ক্লাসের সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই আড্ডা গুলোই হয়তো তাদের মানসিকতার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।
আসাদুজ্জামান আপন
শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।