দেবাশীষ চক্রবর্তী বাবু: শীতের শুরুতেই কলারোয়ার জয়নগরে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। সারা শীত মৌসুম জুড়ে চলতে থাকে বড়ি তৈরির উৎসব। গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়িতে চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করছেন গৃহবধূরা।

আজ(০৬ ই জানুয়ারী) সকালে কলারোয়া উপজেলার জয়নগর দাস পাড়ার একটি বাড়ির ছাদে কয়েকজন গৃহবধূকে বড়ি বানাতে দেখা গেছে।

তাদেরই একজন টূম্পা দাসের কাছ থেকে জানা গেছে,শীত এলে চালকুমড়া ও মাষকলাই (স্থানীয়দের ভাষায় ঠিকরী কলাই) ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করেন তারা। ওই বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় সংরক্ষণ করা হয়।

বিভিন্ন তরকারি বিশেষ করে বড় মাছ রান্নার সময় বড়ি ছেড়ে দিলে তরকারির স্বাদ বেড়ে যায়।বড়ি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, বড়ি দেওয়ার আগের দিন মাষকলাইয়ের ডাল খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সন্ধ্যায় চালকুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ফেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হয়। এরপর কোরানি দিয়ে কুমড়া কুরিয়ে মিহি করে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়।

এতে কুমড়ার পানি বের হয়ে ঝরঝরে হয়ে যায়।পরদিন ভোরে মাষকলাই ডালের পানি ছেকে মিহি করে দেখিতে বা মেশিনে পিসে নিতে হয়।পানি ঝরানো কুমড়ার সংগে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও হালকা লবণ দিয়ে ভালো করে মেশাতে হয়। পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হয়। এক-দুদিন ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। ঝরঝরে হলে বড়ি কৌটায় সংরক্ষণ করে অনেক দিন পর্যন্ত রাখা যায়। তবে মাঝেমধ্যে রোদে শুকিয়ে নেওয়া ভালো।তিনি আরও বলেন, বড়ি তেলে ভেজে মাছের তরকারি বা সবজিতে দিলে স্বাদ অনেক বেড়ে যায়।

একই ছাদে বড়ি দিতে আসা বাসন্তী চক্রবর্ত্তী ও গীতা রানী জানান, শীত এলেই তারা একে অপরকে বড়ি দিতে সাহায্য করেন। এটা  রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বছর ৩০/৪০ আগে শ্বশুরবাড়ি এসে শাশুড়িদের কাছ থেকে এ নিয়ম শিখেছেন তারা। তবে নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ মেয়ে এসব শিখতে বা তৈরি করতে আগ্রহী নন।

স্থানীয় নারীরা জানান, যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে সাতক্ষীরা যশোর-খুলনার বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িতে কুমড়ার বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। সময়ের আবর্তে বড়ি-পিঠাও এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তার পরও গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে বড়ি তৈরি করে খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।