কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোমবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে চারটি ক্যাম্পের পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। এ সময় এক শিশুসহ দুইজন আগুনে পুড়ে মারা গেছে।
আশ্রয়হীন হাজার হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও বালুখালী কাস্টমস এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকে স্থানীয় গ্রামগুলোয় ঢুকে পড়ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ১০ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়েছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প ৮-ই, ডব্লিউ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উখিয়া স্টেশন, রামু স্টেশন ও কক্সবাজার স্টেশন এবং সেনাবাহিনীর ফায়ার ইউনিটসহ পাঁচ ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
আগুনে পুরো ক্যাম্প এলাকা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অনেকে অন্য ক্যাম্পেও আশ্রয় নিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গা শিশু-নারী-পুরুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছোটাছুটি করে। এ সময় অনেক শিশু হারিয়ে গেছে বলে স্বজনরা জানান।
বালুখালী ৯নং ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুর শুক্কুর জানান, দুপুর ২টার দিকে ক্যাম্প ৮-ই, ডব্লিউতে ছনের ছাউনির ঘরে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখান থেকে আগুন মুহূর্তের মধ্যে ক্যাম্প ৯-এ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় ১০নং ও ১১নং ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বালুখালী ৮নং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে পানবাজার এলাকায় আশ্রয় নেওয়া সফিকা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সেখানে তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার সাত বছরের শিশু হারিয়ে যায়।
নূরুল আলম জানান, ছয় বছরের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছি না। এভাবে সন্তান খুঁজতে অসংখ্য বাবা-মাকে দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসক, শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের উখিয়ার ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান জানান, পাঁচ শতাধিক ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। পাশাপাশি শিশুসহ দুইজনের মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘর ও দোকানপাট পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এনজিওর কয়েকটি ভবনেও আগুন লেগেছে।
ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার সৈয়দ মো. তাহফিম জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বালুখালী ৮-ই ক্যাম্পে আগুন লাগে। তা দ্রুত ৮ ডব্লিউ ক্যাম্পে ছড়ায়। বাতাসের বেগে তা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯ ও ১০ নম্বর ক্যাম্পে।
তিনি আরও জানান, আগুনের ভয়াবহতা বাড়ার সঙ্গে রোহিঙ্গারা ছোটাছুটি করেন। তারা শুধু ব্যবহারের কাপড় ও সামনে পাওয়া প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন।
বালুখালি ৮-ই এর ক্যাম্প ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম জানান, বাতাসের গতি বেশি হওয়ায় আগুন বিভিন্ন ব্লকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে সর্বশেষ রাত ৮টার দিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একটি টিম কাজ করছে। প্রাণহানি এড়াতে বিভিন্ন ব্লক থেকে রোহিঙ্গা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা সড়কের ওপর চলে আসায় যানবাহন চলাচলে চরম ব্যাঘাত হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।