একটি প্রবাদ আছে যে ‘টাকা নাকি সুখ কিনতে পারে না, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তথ্য আমাদের দেখিয়েছে যে, টাকা সুখ কিনতে পারে। ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় ও মানসিক সুস্থতার মধ্যে একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। তাহলে এখন একটি নতুন প্রশ্ন ৭৫ হাজার ডলার আয় যুক্তি দেয় যে, আয়ের সাথে সুখ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ টাকা সুখ এনে দিতে পারে।

 

জীবনের অভাব পূরণের জন্য অনেকে সারা জীবন প্রবাসে কাটিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিচ্ছেন জীবনের অপূর্ণতা পূরণ করার জন্য। পৃথিবীর খুব অল্পসংখ্যক মানুষই নিজের সব শখ পূরণ করতে পারে। এর একটি প্রধান কারণ, টাকা! মানুষের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকার দরুণ অনেকে অনেক শখ পূরণ করতে পারেন না। টাকা কি সুখ কিনতে পারে? কখনও কখনও; একটি কঠিন উত্তর নাও হতে পারে। যদিও আয়ের মাত্রার সাথে সুখ বাড়তে বা কমতে পারে, একজন ব্যক্তির মানসিক সুস্থতার প্রকৃত বোধ শেষ পর্যন্ত তার জীবনের পরিস্থিতি, মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করবে।

 

অর্থ কি আপনাকে সুখী করে?
সম্প্রতি ‘ন্যাচার সাসটেইনেবিলিটি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিশ্বের ৩৩টি দেশের ২২০ জন মানুষের উপর জরিপ চালানো হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্ন ছিল, নিজের স্বপ্নের-আদর্শ জীবনযাপন করতে তাদের কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা প্রয়োজন? যদি কখনো লটারি জিতেন, তাহলে কী পরিমাণ টাকা তারা পুরস্কার হিসেবে পাওয়ার আশা করেন? তাদের সামনে বিকল্পগুলোর মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন ১০,০০০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১০০ বিলিয়ন ডলার। শেষোক্ত টাকার অংকটি আসলে সীমাহীন সম্পদের সমান বলেই মনে করছেন গবেষকরা। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই লটারি জেতার পুরস্কার হিসেবে পরিমিত পরিমাণ যা ১ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী একজন মানুষের আয়ুষ্কাল যদি ধরা হয় ৭৮ বছর, তাহলে দেখা যায় ১ মিলিয়ন ডলার পেলে তার বার্ষিক খরচ মাত্র ২৫,০০০ ডলার। গবেষকরা জানিয়েছেন, যারা ১০০ বিলিয়ন ডলার নিতে চেয়েছেন তারা সবাই সামাজিক ইস্যু নিয়ে কাজ করতে চান বলে দাবি করেন। কিন্তু দিনশেষে সবাই নিজেদের ব্যক্তিগত চাহিদা ও পরিবার-পরিজনের পেছনেই টাকা ব্যয় করার কথা জানিয়েছেন। এ গবেষণাটির সঙ্গে আগের একটি গবেষণারও যোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে। টাকা ও সুখের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিল তখন। গবেষণায় বলা হয়, একটা পর্যায়ে গিয়ে মানুষের মনে হয় অঢেল অর্থসম্পদ মানে অনেক সুখ। কিন্তু গবেষণায় এও দেখানো হয়েছে যে একটি কাটঅফ পয়েন্ট আসে যখন গড়পড়তা ব্যক্তির কাছে মনে হয়, টাকা মানেই সুখ নয়।

সব দেশেই কিছু না কিছু মানুষ থাকে যাদের চাহিদা সীমাহীন, যারা নিজেদের তৃপ্ত করতে যতটা সম্ভব সম্পদ কুক্ষিগত করতে চায়। গবেষণায় পরিচালিত জরিপের একটিতে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান লটারিতে ১০০ বিলিয়ন ডলারই জিততে চান; অন্যদিকে চীনে এই ১০০ বিলিয়ন ডলার চাওয়া মানুষের সংখ্যা মাত্র ৮ শতাংশ। অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, লটারিতে সবচেয়ে মোটা অংকের টাকা জিততে চাওয়া মানুষের সংখ্যা ইন্দোনেশিয়ায় বেশি (৩৯ শতাংশ)। অন্যদিকে, রাশিয়ার মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ লটারিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার চেয়েছেন।

গবেষকদের মতে, টাকা বনাম সুখ
একটি বিষয়ে গবেষকরা একমত যে, আয় অন্তত একটি বিন্দু পর্যন্ত সুখকে প্রভাবিত করে এবং কিছু লোকের জন্য বেশি উপার্জন করা তাদের সুস্থতা এবং জীবনের সন্তুষ্টি বাড়াতে পারে। অর্থাৎ আয়ই সুখকে প্রভাবিত করার একমাত্র কারণ নয়। একই পরিমাণ আয় প্রত্যেকের সুখকে একইভাবে প্রভাবিত করবে না। কিছু জিনিস এখনও পরিষ্কার নয়- আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে, অন্যান্য কারণের তুলনায় সুখের জন্য অর্থ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বা আমরা জানি না যে আপনার সুখী হওয়ার জন্য কত টাকা দরকার। মনস্তাত্ত্বিক গবেষক পল বেইন বলেন, মানুষের চাহিদা সীমাহীন- এই মতাদর্শটিকে যখন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়, তখন সমাজে যাদের প্রচুর অর্থবিত্ত নেই তাদের উপর এটি এক ধরনের সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে এবং তারা সত্যিকারের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কেনাকাটা করে।

 

সুখকে প্রভাবিত করার অন্যান্য কারণ

সামাজিক পদমর্যাদাও সুখকে প্রভাবিত করে। সামাজিক জীবনের স্তরে প্রেম, বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক জড়িত। এটা স্পষ্ট যে অর্থই একমাত্র সুখের কারণ নয় যা আমাদের সুখকে প্রভাবিত করে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। অর্থ কেবল সুখকে প্রভাবিত করে না, তবে অন্যান্য জিনিসগুলো আমাদের সুখকে কতটা প্রভাবিত করে তার একটি অন্তর্নিহিত কারণও হতে পারে । মূলত বিনিয়োগ এবং অন্যান্য কৌশলগুলোর মাধ্যমে আপনার আয় বৃদ্ধিতে মানসিক সুস্থতা বাড়াতে পারে। সুখ আনতে প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষের চাহিদা অফুরন্ত। এজন্যই ইলন মাস্ক ও জেফ বেজোসের মতো ধনকুবেরদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার থাকার পরেও তাদের টাকা উপার্জনের নেশা কমে না। এদের হাতে টাকার পাহাড় হতে পারে তবে সুখী কিনা তা অজানা। সুখী ব্যক্তিরা শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা চায়। এটা নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ টাকা লাগে তা ব্যক্তি অনুসারে আপেক্ষিক অর্থাৎ কমবেশি।