সমুদ্রের ধার ঘেঁষে উঠে গিয়েছে ছোট্ট একটি পাহাড়। আর সেই পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে অদ্ভুত এক গাছ। একটি নয়, আসলে সাতটি গাছ পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। ইতালির (Italy) বেশ কয়েকটি আশ্চর্য গাছকে ‘মনুমেন্টাল ট্রি’ (Monumental Tree) বলে বিবেচনা করা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্য বোধহয় আব্রুৎজো সৈকতের (Abruzzo Beach) এই গাছটি। কোনো একক গাছের গুঁড়ি এত বড়ো হতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকদের কাছেও বিশেষ আকর্ষণের এই পন্টোন বিচ ট্রি (Pontone Beach Tree)। সেইসঙ্গে একে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এক বিচিত্র বাস্তুতন্ত্র। কয়েকশো বছর ধরে মাটির নিচে তার শিকড় বেড়েই চলেছে। এখন আশেপাশের কয়েকটা সমুদ্রতীরেও পন্টোন বিচ ট্রির শিকড় ছড়িয়ে পড়েছে। আর এর ডালপালা মাটি ছাড়িয়ে প্রায় ৭০ ফুট উঠে গিয়েছে।

ঠিক কত বছর ধরে পন্টোন বিচ ট্রি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানেন না কেউই। তবে বেশ কিছু আনুষাঙ্গিক প্রমাণ থেকে মনে হয়, এর বয়স ৭৫০ বছরের কম নয়। স্বাভাবিকভাবেই আশেপাশের মানুষের জীবনের সঙ্গেও জড়িয়ে গিয়েছে গাছটি। এমনিতে কয়েক দশক আগেও এই অঞ্চলে বে-আইনি বৃক্ষছেদনের ঘটনা খুব কম ঘটত না। তবে পন্টোন বিচ ট্রির কোনো ক্ষতি কেউ কখনও করেনি। এর মধ্যে ১৯৩৯ সালে ইতালিতে প্রথম বৃক্ষ সংরক্ষণ বিষয়ক আইন পাশ হয়।

তখনই সারা দেশে ২২ হাজার গাছকে মনুমেন্টাল ট্রি আখ্যা দেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী এই গাছগুলি কোনোদিন কোনো কারণেই কাটা যাবে না। তবে ১৯৩৯ সালের আইনটিও সম্পূর্ণ ছিল না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন অনেক পরিবেশকর্মী। কারণ আইনে কেবলমাত্র গাছগুলির নান্দনিক দিকটির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু এছাড়াও তাদের যে বিরাট বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা রয়েছে, তা যেন আড়ালেই থেকে যায়।

এই প্রসঙ্গেই পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা রোসালিয়া লংগিকর্ন নামের একটি পোকার উল্লেখ করেছেন। প্রায় সারা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে এই পোকাটি। কিন্তু পন্টোন বিচ ট্রিকে ঘিরে এখনও তাদের বসতি দেখতে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, আশেপাশের গোটা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে এই গাছটির উপরেই। এই গাছের বীজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে নতুন গাছের জন্ম দেয়। আর ক্রমশ পরিবেশ যেভাবে দূষিত হচ্ছে, তাতে সত্যিই সংকটে রয়েছে এই গাছ। নিছক আইনের মাধ্যমে হয়তো সত্যিই বাঁচানো সম্ভব হবে না পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য এই গাছকে।